Titagarh Municipality

অয়নকে টাকা না-দেওয়ায় ‘হুমকি’, কাজে যাওয়া বন্ধ

টিটাগড় পুরসভার খবর, ২০১৯ সালে সেখানে কর্মী নিয়োগ হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বরাত পেয়েছিল অয়নের সংস্থা। চয়নিকা জানান, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে তিনি খেলার কোটায় চাকরি পান।

Advertisement

সুদীপ দাস

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২০
Share:

বাড়িতে চয়নিকা। ছবি: তাপস ঘোষ

পাঁচ দিন কাজ করেছিলেন তিনি। তার পরে টাকার দাবিতে অয়ন শীলের ‘হুমকি’র মুখে আর কাজে যেতে পারেননি টিটাগড় পুরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী চয়নিকা আঢ্য!

Advertisement

অয়নের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছেন হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা ওই মহিলা। তাঁর দাবি, ভয়ে কোথাও অভিযোগ জানাতে পারেননি তিনি। নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি-র হাতে অয়ন ধরা পড়ার পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি মুখ খুলেছেন।

টিটাগড় পুরসভার খবর, ২০১৯ সালে সেখানে কর্মী নিয়োগ হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বরাত পেয়েছিল অয়নের সংস্থা। চয়নিকা জানান, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে তিনি খেলার কোটায় চাকরি পান। তিনি যোগাসন জানেন। ২০২০ সালের মার্চে কাজে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে তা পিছিয়ে যায়। তাঁর অভিযোগ, ওই বছরের গোড়ায় অয়ন জানান, কাজে যোগ দিতে হলে ৫ লক্ষ টাকা তাঁকে দিতে হবে। চয়নিকা দেননি। তাঁর দাবি, তখন অয়ন জানিয়ে দেন, টাকা না দিলে তিনি যেন কাজে না যান। পুলিশ-প্রশাসনে জানালে খুনের হুমকিও দেওয়া হয় বলে মহিলার অভিযোগ। এমনকি, লকডাউনের সময় অয়নের লোকজন বাড়িতে এসে এবং ফোনেও টাকা চেয়ে হুমকি দিতে থাকেন— এই অভিযোগও তুলেছেন চয়নিকা।

Advertisement

চয়নিকার দাবি, ওই অবস্থায় তিনি এক বার বাবাকে নিয়ে চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ায় অয়নের অফিসে যান। সেখানে অয়ন এবং তাঁর এক ঘনিষ্ঠ তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। চয়নিকার দাবি, হুমকি অগ্রাহ্য করেই ওই বছরের ২ জুলাই তিনি কাজে যোগ দেন। ২, ৩, ৬, ৭ এবং ৮ জুলাই কাজ করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর পরে অয়ন ফোনে আমার পরিবারকে খুনের হুমকি দেন। ভয়ে আর কাজে যেতে পারিনি। কোথাও অভিযোগ জানানোরও সাহস হয়নি। পুর-কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই অয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। না হলে আজ পর্যন্ত পুরসভা আমাকে কোনও চিঠি দিল না কেন?

অভিযোগ মানেননি টিটাগড়ের তৎকালীন পুরপ্রধান প্রশান্ত চৌধুরী। তাঁর দাবি, "ওই মহিলার (চয়নিকা) কথা মনে আছে। হঠাৎ করে উনি কাজে আসা বন্ধ করলেন কেন, বলতে পারব না।"

শ্রম আইন কী বলছে?

রাজ্য শ্রম দফতরের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন, আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, চাকরি পেয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগ না দিলে বা ‘‘যোগদানের পরে দীর্ঘদিন কাজে না গেলে, পুরসভার বিভাগীয় প্রধান (বড়বাবু) সংশ্লিষ্ট কর্মীকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠাবেন। পর পর তিনটি চিঠির উত্তর না মিললে, ‘বড়বাবু’ তাঁর কর্মজীবনে ইতি টানতে পারবেন।এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? পুরসভার তৎকালীন ‘বড়বাবু’ শঙ্করকুমার সিংহ বলেন, ‘‘দু'বছর আগে অবসর নিয়েছি। তখনকার ঘটনা অতটা মনে নেই। তবে, উনি (চয়নিকা) কাজে যোগ দেয়নি। তাই, চিঠি পাঠানোর প্রশ্নই ছিল না।’’ চয়নিকা জানান, তিনি যে পুরসভায় পাঁচ দিন কাজ করেছিলেন, সেই নথি তাঁর কাছে আছে। "বর্তমান পুরপ্রধান কমলেশ সাউয়ের প্রতিক্রিয়া, "পুরো বিষয়টিই গত পুরবোর্ডের সময়ে। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

চয়নিকার কাজ আদৌ আছে কি নেই, এ বিষয়ে কোনও সদুত্তর মেলেনি।পুরপ্রধান বলেন, "শ্রম দফতর জানাতে পারবে।" ব্যারাকপুর শ্রম দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, "চয়নিকার চাকরি হয়েছিল পুরসভায়। তাই কাজ থাকা না থাকার বিষয়টি ওঁদেরই (পুর কর্তৃপক্ষ) আগে জানা উচিত।"

তবে, চয়নিকার অভিযোগ সারা ফেলেছে রাজনৈতিক মহলে। "বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক অভিষ্কার ভট্টাচার্য বলেন, "ওই মহিলার সঙ্গে সত্যিই এমন হয়ে থাকলে, অত্যন্ত নিন্দনীয়। উনি যাতে কাজে যোগ দিতে পারেন, প্রশাসনের দেখা উচিত।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement