Jadavpur University

Biswakarma Puja: ‘মেশিন আছে কিন্তু কাজ নেই, ঘটেই এ বার পুজো সারছি’

হাওড়ায় মূল শিল্পই হল ঢালাই শিল্প। সেই শিল্পের প্রায় অর্ধেক এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকারখানার জমি বিক্রি করে প্রোমোটিং হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৫৩
Share:

অপেক্ষা: বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিনও ক্রেতার দেখা নেই। বৃহস্পতিবার, হাওড়ার কালীবাবুর বাজারে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

অতিমারি পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে কাজ না থাকায় চরম অর্থাভাব। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে এ বার শুধু ঘটপুজো করেই বিশ্বকর্মা পুজো সারছে শিল্পনগরী হাওড়া। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, খরচ কমাতে অনেক ক্ষেত্রে একাধিক কারখানার মালিক একটি প্রতিমা এনে যৌথ ভাবে পুজোর আয়োজন করতে চাইছেন।

Advertisement

অথচ এক সময়ে এই শিল্পনগরী হাওড়াতেই ধুমধাম করে হত বিশ্বকর্মা পুজো। বিভিন্ন কলকারখানায় বসত গানের আসর, যাত্রাপালা। চলত খানাপিনা। শয়ে শয়ে প্রতিমার বায়না হত পটুয়াপাড়ায়। বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষেই মাইকে গমগম করে বাজত দুর্গাপুজোর আগমনী গান। সে সব এখন অতীত। কোভিড পরিস্থিতিতে আর ধুমধাম নয়, বরং কোনও রকমে নমো নমো করেই বিশ্বকর্মার আবাহন করছে হাওড়া।

হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বালি ব্রিজ, বেলিলিয়াস রোড থেকে বেলগাছিয়া জুড়ে রয়েছে ৬০-৭০ হাজার ছোট ছোট কলকারখানা। এক সময়ের ‘শেফিল্ড’ শিল্পনগরী হাওড়ার কারখানাগুলি চলত মূলত রেলের যন্ত্রাংশ, সেতু তৈরির উপকরণ, খনির যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। বছর চারেক আগে থেকে এই সব যন্ত্রাংশ তৈরির বরাত কমতে থাকে। কম দামে এই সব যন্ত্রাংশ বহুজাতিক সংস্থাগুলি সরবরাহ করতে শুরু করায় মুখ থুবড়ে পড়ে হাওড়ার ছোট কলকারখানা। ফলে বরাতের অভাবে একে একে প্রচুর কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারখানার ভবিষৎ
অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় অনেকে কাজ ছেড়েও দিয়েছেন। ফলে কোনও রকমে লড়াই করে টিকে থাকা কারখানাগুলিও দক্ষ শ্রমিকের অভাবে আজ ধুঁকছে।

Advertisement

ইছাপুরের শিয়ালডাঙার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দলুইয়ের কারখানায় আগে কাজ করতেন পাঁচ জন শ্রমিক। কিন্তু বরাত না থাকায় এখন রবীন্দ্রনাথ একাই কাজ করেন সেখানে। তিনি বলেন, ‘‘মেশিন আছে, কিন্তু কাজ নেই। হাওড়া শিল্পাঞ্চল কাজের অভাবে শ্মশান হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকর্মা পুজো হবে কী ভাবে? ঘটেই তাই
এ বার পুজো সারছি।’’

অথচ বছর চারেক আগেও ছবিটা অন্য রকম ছিল। ইছাপুর শিয়ালডাঙা, লিলুয়া, বেলগাছিয়া, বেলিলিয়াস রোড, কদমতলায় বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন থেকে শুরু হয়ে যেত উৎসব। তারস্বরে বেজে চলা মাইকের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। আর এ বার? বৃহস্পতিবার, পুজোর আগের দিন গোটা শিল্পাঞ্চল ঘুরেও কানে আসেনি কোনও মাইকের আওয়াজ। নেই উৎসবের আমেজ। পুজোর আগের দিনও যেন ঝিমিয়ে রয়েছে গোটা শিল্পতালুক।

টিকিয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলের একটি কারখানার মা‌লিক দীপঙ্কর পোদ্দার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, আমরা ৪০টি কারখানার মালিক মিলে চাঁদা দিয়ে একটিই প্রতিমা আনিয়ে পুজো করছি। খাওয়াদাওয়া তো দূরের কথা, সবাইকে বলেছি চা-ও নিজের পয়সায় খেতে হবে।’’

হাওড়ায় বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যা যে অনেকটাই কমে গিয়েছে, তা মানছেন হাওড়া জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পুজো একদম কমে গিয়েছে। বাজারে ফল-ফুল বিক্রেতারাও মাথায় হাত দিয়ে বসে। এমন অবস্থা আগে দেখিনি। নমো নমো করে যে কারখানায় পুজো হচ্ছে, সেখানেও শ্রমিকেরা মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’

অসিত জানাচ্ছেন, হাওড়ায় মূল শিল্পই হল ঢালাই শিল্প। সেই শিল্পের প্রায় অর্ধেক এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকারখানার জমি বিক্রি করে প্রোমোটিং হচ্ছে। কাজ না থাকায় শ্রমিকেরা টোটো চালাচ্ছেন। বেশির ভাগ কারখানায় পুজো না হওয়ায় বিশ্বকর্মার বায়না নেই পটুয়াপাড়াতেও। সেখানে তৈরি হলেও প্রতিমা পড়েই রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement