বালির চড়া দাম। —ফাইল চিত্র।
এ বার এখনও পর্যন্ত আরামবাগ মহকুমার কোনও বৈধ বালিখাদ থেকেই বালি তোলা শুরু হয়নি। তাই জোগানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মহকুমায় এখন যে বালি মিলছে, গত বছরের চেয়ে তার দ্বিগুণ দাম বা আরও বেশি। ফলে, ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় বাড়ি তৈরি করতে উপভোক্তারা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনই গ্রামোন্নয়নের কাজও গতি পাচ্ছে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধান ও একাধিক বিডিও।
গতবার এই সময়ে আরামবাগে ১০০ ঘনফুট (সিএফটি) বালি বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকায়। মহকুমার বালি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে এলাকার কোনও বালিখাদ থেকে বালি না-মেলায় বাঁকুড়া বা পূর্ব বর্ধমান থেকে আনতে হচ্ছে। তাতেই খরচ বেশি হচ্ছে।
ওই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরামবাগের পুইনের মাজারুল আলম গত বার আরামবাগের একটি বালিখাদের ইজারা পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দ্বারকেশ্বর নদ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর মোট ১৪টি সরকারি বালিখাদের ইজারার মেয়াদ দফায় দফায় শেষ হয়েছে প্রায় বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু একজন বাদে কাউকে নতুন করে ইজারা দেওয়া হয়নি এখনও। যিনি ইজারা পেয়েছেন, তাঁকেও এখনও বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’
ওই ইজারা দেয় সরকারি সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’। শেখ নিজামউদ্দিন নামে চাঁদুরের এক বালি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এখন ১০০ ঘনফুট বালি ৬ হাজার বা সাড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কিছু করার নেই। পরিবহণ খরচ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’’
পুরশুড়ার বড়দিগরুইতে মুণ্ডেশ্বরী নদীর একটি খাদ ছাড়া জেলায় এখনও কোনও বালিখাদ নতুন করে ইজারা দেওয়ার তথ্য নেই জানিয়ে জেলা ভূমি দফতরে এক আধিকারিক বলেন, “প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এ ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত হয় রাজ্য স্তরে। নির্দিষ্ট সংস্থা দরপত্র ডেকে ইজারা দেয়। ফলে, এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।” বড়দিগরুইয়ের বালিখাদের ইজারাপ্রাপ্ত প্রশান্ত হাইতের আশা, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বালি তোলার বরাত মিলবে।
ইট-সিমেন্টের মতো নির্মাণ সামগ্রীর দামবৃদ্ধিতে এমনিতেই বাংলা আবাসের উপভোক্তারা চিন্তায় ছিলেন। তার উপরে বালির দ্বিগুণ দামে তাঁরা কার্যত দিশাহারা। এমনটাই জানিয়েছেন খানাকুলের বেশ কয়েক জন উপভোক্তা। পঞ্চায়েত প্রধানদের বক্তব্য, গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন কাজের মূল ভরসা কেন্দ্রের পঞ্চদশ অর্থ কমিশন এবং রাজ্যে পঞ্চম অর্থ কমিশনের তহবিল। সেই টাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়। কিন্তু সেই কাজও বালির মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে গতি পাচ্ছে না।