আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারের হাতে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ তুলে দিতে হবে। সোমবার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস এই নির্দেশ দিয়েছেন। আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় একমাত্র দোষী কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় দাসকে আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি দিয়েছেন তিনি। দোষীর শাস্তি ঘোষণার সময়ে বিচারক জানান, নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কর্তব্যরত অবস্থায় খুন হওয়ার জন্য ১০ লক্ষ টাকা এবং তাঁকে ধর্ষণের জন্য সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি দাসের এজলাসে দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির আর্জি জানান নির্যাতিতার আইনজীবী। তবে দোষীর আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এই ঘটনাকে বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ বলে মনে করছে না আদালত। আদালত শাস্তি ঘোষণার সময়ে ক্ষতিপূরণের কথা শুনে নির্যাতিতার বাবা এজলাসে জানান, তিনি এই ক্ষতিপূরণ চান না। তখন বিচারক দাসও বলেন, “আমিও মনে করি না টাকা দিয়ে এর ক্ষতিপূরণ করা যাবে। আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ করা হচ্ছে। আমাকে এমনি বলা হলে আমি (আর্থিক সহায়তার নির্দেশ) দিতাম না। আপনি এটি নিতে চাইছেন না, তা-ও লিখছি। এটি বিধিবদ্ধ নিয়ম।”
নির্যাতিতার বাবা জানান, তিনি মেয়ের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার জন্য ন্যায়বিচার চাইছেন। আদালতের শাস্তি ঘোষণার পর এজলাসে দৃশ্যত কাঁদো কাঁদো দেখায় সঞ্জয়কে। কিছুটা বিচলিত বলে মনে হয়। বিড়বিড় করতে থাকেন এজলাসে। কিছু ক্ষণ পরে দোষী সিভিককে এজলাস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতিতার বাবা-মা চুপচাপ বসে থাকেন এজলাসের একটি বেঞ্চে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩ (১)— এই তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। ৬৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, ১০৩(১) ধারায় যাবজ্জীবন এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬৬ ধারায় আজীবন কারাবাসের শাস্তি দিয়েছেন বিচারক দাস। সঞ্জয়কে বিচারক জানিয়েছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁকে কারাবাসে থাকতে হবে।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)