এই বাড়িতেই চলছে কারখানা। নিজস্ব চিত্র
হলদিয়ার পরে এ বার হুগলির বৈদ্যবাটী। ফের সরকারি প্রকল্পের বাড়িতে ব্যবসা কেন্দ্র!
বৈদ্যবাটীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ সরণিতে আবাস প্রকল্পের বাড়িতে চানাচুর কারখানা চালানোর অভিযোগ সামনে এল। বাড়ির মালিক শিবু পণ্ডিতের ছেলে বিশ্বজিতের প্রশ্ন, ‘‘মানুষ নিজের বাড়িতে করে খাবে, সেটা পারা যাবে না?’’
বেশ কিছুদিন ধরে সকলের চোখের সামনে সরকারি প্রকল্পের বাড়িতে ওই কারখানা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। ওই কারখানা বন্ধের জন্য পুরসভার তরফে মালিককে নোটিস পাঠানো হবে। আবাস প্রকল্পের ঘর কোনও ভাবেই বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করা যাবে না।’’ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার সঙ্গে আমরা কথা বলব। তদন্ত করে যদি দরকার পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সম্প্রতি হলদিয়া শহরে আবাস যোজনার বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওষুধের দোকান খোলার অভিযোগ সামনে আসে। বৈদ্যবাটীতেও একই রকম অভিযোগ ওঠায় গরিব মানুষের জন্য বাড়ি তৈরির প্রকল্প বিলি-বণ্টনের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রিষড়ার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ পল্লিতে শিবুদের পাকা বাড়ি আছে। পরিবারটি সেখানেই থাকে। তাই বৈদ্যবাটীতে আবাস প্রকল্পে বাড়ির অনুমোদন এবং সেখানে কারখানা করা নিয়ে পুরসভায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন পড়শি প্রতিমা দাস। তিনি জানান, তাঁর এবং অন্য শরিকদের কাছ থেকে শিবু ২০১৬ সালে ১ কাঠা ৩ ছটাক জমি কেনেন ৪ লক্ষ টাকায়। ওই জমিতে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি হয়েছে এক বছর আগে। সেখানেই শিবুর ছেলেরা কয়েক মাস আগে চানাচুরকারখানা করেছেন।
ক’দিন আগে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, নীল-সাদা রঙের বাড়ির সামনে কারখানার বোর্ড। ছাদে শেড। তবে, সরকারি টাকায় বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে উপভোক্তা এবং নির্দিষ্ট প্রকল্পের নাম চোখে পড়ল না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, ‘ন্যানো বাড়ি’তে (সরকারি প্রকল্পের টাকায় তৈরি বাড়ি এই নামেই স্থানীয় ভাবে পরিচিত) কী ভাবে কারখানা হয়, তা নিয়ে তাঁরা বিস্মিত। গত শনিবার কারখানার বোর্ডটি খুলে নেওয়া হয়।
পাশেই টালির বাড়িতে নাতিকে নিয়ে থাকেন প্রতিমা। জুটমিলের শ্রমিক ওই মহিলার প্রশ্ন, ‘‘চার লক্ষ টাকায় যাঁরা জমি কিনতে পারেন, রিষড়ায় পাকা বাড়ি রয়েছে, তাঁরা কী করে ন্যানো বাড়ি পান? সেখানে চানাচুর কারখানাই বা কী করে হয়?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই বাড়ির প্ল্যান কী করে হয়, তা বিস্ময়কর। কারণ, কোনও ছাড় না দিয়েই বাড়িটি হয়েছে। যতদূর জানি, এই প্রকল্পে ঘর পেতে হলে এবং সেখানে থাকার ব্যাপারে নানা শর্ত রয়েছে। এই শর্ত লঙ্ঘন করে কী করে এই বাড়ি হল? প্রশাসনই বা কী করে অর্থ মঞ্জুর করল?’’
বিশ্বজিতের বক্তব্য, ‘‘ওই বাড়ি বাবার নামে। বাবা জুট মিলে কাজ করতেন। আমরা তিন ভাই। আমরা ভিন রাজ্যে কাজ করতাম। লকডাউনের সময় তিন জনেরই কাজ চলে যায়। তাই বাবার অবসরের টাকায় কারখানাটা করা হয়। দু’মাস হল চালু হয়েছে।’’
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘শুনেছি, বাড়ির পাশে ওঁদের জমি আছে। প্রয়োজনে সব নিয়ম মেনে ওঁরা সেখানেকারখানা করুন।’’