অপরূপা পোদ্দার।
মানুষের কাছে তাঁর ভূমিকা আড়াল করতে, সাংসদ তহবিলের টাকায় হওয়া উন্নয়নমূলক কাজের তালিকা টাঙানো হয় না হরিপালে। বিরোধী কোনও জনপ্রতিনিধি নন, সমাজমাধ্যমে ভিড়িয়ো বার্তায় এমন অভিযোগ করলেন শাসক দলের আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। হরিপাল বিধানসভা ওই লোকসভা কেন্দ্রেই।
দিন কয়েক আগে হরিপালের চন্দনপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় গ্রামবাসীদের একটি সাবওয়ের দাবি নিয়ে সভা ডাকে তৃণমূল। দলীয় সাংসদ অপরূপা সেখানে গেলে জলঘোলা হয়। সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়। ভিড়ে উপস্থিত গ্রামবাসীদের একাংশ প্রশ্ন তোলে, তিনি ওই এলাকার উন্নয়নে টাকা দেন না। ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও শুনতে হয়।
ভিডিয়ো ছবি ছড়িয়ে ওই অভিযোগ খণ্ডন করেছেন অপরূপা। ভিডিয়ো বার্তার শিরোনাম, ‘কুৎসা ও অপপ্রচারের জবাব’। তাতে সাংসদের দাবি, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি হরিপাল বিধানসভা এলাকার উন্নয়নে সাংসদ তহবিল থেকে ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৮২ হাজার ২৫৩ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এক সাধারণ মানুষের বক্তব্য শোনেন, সাংসদ কোটার টাকায় হরিপালে কোনও উন্নয়ন হয়নি। শুনে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছেন। অপরূপার বক্তব্য, তাঁর তহবিলের টাকা খরচের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও কাজের উদ্বোধন কখনও হয়নি। ওই সব কাজের বোর্ডও লাগানো হয়নি। অর্থাৎ, তাঁর কাজের প্রচার করা হয় না।
ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার। তবে, সেটি যে তাঁরই, অপরূপা অস্বীকার করেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওখানে (হরিপাল) মানুষের কাছে সাংসদের ভূমিকা পুরোপুরি আড়াল করা হচ্ছে নানা ভাবে।’’ সাংসদ তহবিলের টাকা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকের দফতর থেকে বিডিও-র কাছে যায়। বিডিও-র মাধ্যমেই সেই টাকায় উন্নয়নের কাজ হয়। আপরূপার অভিযোগ, ‘‘বিধি অনুয়ায়ী প্রতিটি বিধানসভা এলাকা ধরে ধরে সাংসদ কোটার টাকা ভাগ করে দিই। কিন্তু হরিপালে কৌশলে আমার দেয় সেই টাকায় কাজ হলেও উদ্বোধন করা হয় না। বোর্ডও না টাঙানোয় মানুষ জানতে পারেন না। পুরো বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে আড়াল করা হয় বলেই তাঁরা জানতে পারছেন না যে, সাংসদ তহবিলের টাকায় উন্নয়ন হচ্ছে।’’
অপরূপার অভিযোগ তৃণমূলের পাশাপাশি জেলার প্রশাসনিক মহলেও শোরগোল ফেলেছে। তবে, জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও অভিযোগ সরাসরি সাংসদের থেকে প্রশাসনের কাছে আসেনি। এলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’’
অপরূপার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, হরিপাল এবং সিঙ্গুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দিন দিন চওড়া হচ্ছে। সাংসদের ক্ষোভ তারই প্রতিফলন। এ ব্যাপারে দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়ে প্রতিক্রিয়া, ‘‘সাংসদ যে সময়ের কথা বলছেন, দলীয় সংগঠনের দায়িত্বে আমি ছিলাম না। ফলে, কি হয়েছে জানি না। খোঁজ নেব।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।