এই বাড়ি ভাঙার কাজ করতে গিয়েই মৃত্যু হয় বীরু মাঝির (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র
পুরনো তেতলা বাড়ি ভাঙার কাজের সময় ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। রবিবার দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বৈদ্যবাটীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁতিরবাগানে। মৃত বীরু মাঝি (২৮) বৈদ্যবাটীতেই রেললাইনের পশ্চিমপাড়ের একটি ঝুপড়ির বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার জেরে নির্মাণকর্মীদের নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এই মৃত্যু। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, বিপদের ঝুঁকি এড়াতে কোনও ব্যবস্থা ছিল না। সেই কারণেই এই পরিণতি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার পরে গুরুতর জখম অবস্থায় সহকর্মীরা বীরুকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাতে তিনি মারা যান। সোমবার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ঝুপড়িতে বীরুর মা, স্ত্রী এবং তিন নাবালক ছেলেমেয়ে রয়েছে। বীরু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সংসার কী ভাবে চলবে, ভেবে পাচ্ছেন না স্ত্রী এবং মা। ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।
এই ঘটনার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক নিজেরাই শ্রমিক লাগিয়ে বাড়ি ভাঙার কাজ করাচ্ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ফলে, এ ক্ষেত্রে ওই নির্মাণকর্মীর নিরাপত্তার দায়িত্ব কার, সেই প্রশ্ন উঠছে। অনেকেরই বক্তব্য, এই ধরনের শ্রমিকরা নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন নন। ঠিকাদারদের মাধ্যমে বহু শ্রমিক কাজ করেন। অভিযোগ, ন্যূনতম নিরাপত্তা ছাড়াই তাঁদের কাজ করতে হয়। আবাসনের ক্ষেত্রে উঁচুতে কাজের সময়েও হেলমেট বা সেফটি বেল্ট থাকে না। ফলে, শ্রম দফতর বা পুরসভার উচিত তাঁদের সচেতন করার ব্যবস্থা করা। যাতে, এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়।
শ্রম দফতরের খবর, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নির্মাণকর্মী নানা সুবিধা পান। শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়। কিন্তু ক’জন তার খোঁজ রাখেন! চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ সমিতির আইনি পরামর্শদাতা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মোট ৬৪ ধরনের শ্রমিক নির্মাণকর্মী হিসেবে চিহ্নিত। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের বিষয়ে বহু নির্মাণকর্মী জানেনই না। তাঁরা সবাই যাতে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হন, সেই দায়িত্ব শ্রম দফতর এবং পুরসভার নেওয়া উচিত। পুরসভা থেকে ঠিকাদার লাইসেন্স নেন। পুরসভা এ ব্যাপারে ঠিকাদারদের ভূমিকা পালন করতে বলতে পারে।’’
বৈদ্যবাটীর ঘটনাটির প্রেক্ষিতে এখানকার পুর-পারিষদ (পূর্ত) সুবীর ঘোষ বলেন, ‘‘পুরসভায় কেউ বাড়ি ভাঙার আবেদন করলে, অনুমতি দেওয়া হয়। কিছু ঘটলে জমির মালিক বা যিনি কাজটি করছেন, তার উপরেই দায় বর্তায়।’’ পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, ‘‘বাড়িটি ভাঙার জন্য পুরসভার অনুমতি নেওয়া হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলরকে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। তার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বাড়ির মালিক অজয় মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘পুরসভার অনুমতি নিয়ে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। যাঁরা ওই কাজ করেন, তাঁরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য দড়ি ও বেল্ট ব্যবহার করেন। কয়েক দিন তাঁরা না আসায় কিছু স্থানীয় শ্রমিককে ছাদ থেকে জিনিসপত্র নামানোর কাজে লাগানো হয়েছিল। এতেই বিপত্তি হয়। ওই শ্রমিকের পরিবারকে যথাসাধ্য আর্থিক সহযোগিতার কথা জানিয়েছি।’’
শ্রীরামপুর শ্রম দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বৈদ্যবাটীতে ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নিচ্ছি। ওই শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে তাঁর পরিবার সরকারি সুবিধা নিশ্চয়ই পাবেন।’’ বীরুর পরিবার জানিয়েছে, তিনি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।