অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রাতে ডানকুনিতে। —নিজস্ব চিত্র।
অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার পয়সা নেই। অগত্যা অসুস্থ স্ত্রীকে টোটোয় চাপিয়ে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থেকে কলকাতায় গেলেন প্রৌঢ়। বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতায় আসার পথে হুগলির ডানকুনিতে ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় টোটো থেমে যায়। তখনই স্থানীয়দের গোচরে আসে বিষয়টি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় এবং ডানকুনি পুরসভার হস্তক্ষেপে বুধবার রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যালে পৌঁছন ওই প্রৌঢ়। তার পর শহরের একের পর এক হাসপাতালে ঘুরলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত ওই প্রৌঢ় তাঁর স্ত্রীকে কোথাও ভর্তি করাতে পারেননি বলে খবর।
ওই প্রৌঢ়ের নাম উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার সালারে। কয়েক দিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছেন তাঁর স্ত্রী শিবানী। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা নানা শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা করার কথা বলেন। কিন্তু অর্থের অভাবে উপেন সেই সব পরীক্ষা করাতে পারেননি। কয়েক দিন আগে স্ত্রীর অসুস্থতা বাড়লে কেতুগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে যেতে বলা হয়। উন্নত চিকিৎসার আশায় স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উপেন। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার সংস্থান না থাকায় নিজের টোটোয় স্ত্রীকে চাপিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সঙ্গে নিয়েছিলেন পুত্রকে।
প্রায় ১৬ ঘণ্টা টোটো চালানোর পরে ডানকুনিতে ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যায়। ডানকুনি পুরসভার চেয়ারম্যান হাসিনা শবনমের কাছে খবর যায়। চেয়ারম্যান একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেন। রাতে স্ত্রীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সেই কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে রওনা দেন উপেন। পরে তিনি বলেন, “বর্ধমান থেকে কলকাতায় যেতে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক পাঁচ-ছ’হাজার টাকা ভাড়া চাইছিল। সেই টাকা আমার কাছে নেই। অগত্যা টোটো নিয়ে স্ত্রীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ সামলাতে গিয়ে এমনই হাল হয়েছে ছেলেটার পড়াশোনার খরচ টানতে পারছি না। ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাই দিতে পারল না।” উপেনকে খাবার, জল এবং কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করেন ডানকুনির কয়েক জন মানুষ।
তবে কলকাতা মেডিক্যালে গিয়েও স্ত্রীকে ভর্তি করাতে পারেননি উপেন। সেখান থেকে তাঁদের এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসএসকেএমে গেলে সেখান থেকে পাঠানো হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে।