Bank Fraud

‘ব্যাঙ্ককর্তা’কে ওটিপি বলতেই গায়েব ২০ লক্ষ

মৌসুমীকে বিভ্রান্ত করে মোট ৪৪ বার তাঁর থেকে ওটিপি জেনে নেয় প্রতারক। দেড় ঘণ্টার মধ্যে ১৬ বারে অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ১৯ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৬৯ টাকা তুলে নেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ব্যাঙ্কের আধিকারিক পরিচয়ে ফোন করে অ্যাকাউন্টের তথ্য জেনে টাকা লোপাটের ঘটনা অব্যাহত। এ বার প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খোয়ালেন শ্রীরামপুরের এক মহিলা। তিনি চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, এমন ঘটনা বেড়ে চলেছে। পুলিশ আধিকারিকদের খেদ, ব্যাঙ্কের কোনও তথ্য ফোনে না-জানানোর জন্য প্রচার করা হলও এক শ্রেণির মানুষ ভুল করে ফেলছেন। সাইবার অপরাধীরা নিশানা করছে মূলত বয়স্কদের।

শ্রীরামপুরের প্রতারিত বছর আটান্নর মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বিমা সংস্থার কর্মী। তাঁর এবং মেয়ে সুনন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রবর্তীর নামে যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শ্রীরামপুর শাখায়। তাতে ফোন নম্বর রয়েছে মৌসুমীর। সুনন্দিতা জানান, বুধবার বিকেলে মায়ের মোবাইলে পুরুষকণ্ঠে ফোন আসে ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে। বলা হয়, অ্যাকাউণ্ট রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনে কিছু তথ্য দরকার। অভিযোগ, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ‘কাস্টমার আইডি’ জানার অনুরোধ পাঠায় দুষ্কৃতী। তা যাচাইয়ের জন্য ওটিপি আসে মৌসুমীর মোবাইলে। দুষ্কৃতীর কথায় বিভ্রান্ত হয়ে তিনি ওটিপি বলে দেন। আরও নানা তথ্য হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতী।

Advertisement

মৌসুমীকে বিভ্রান্ত করে মোট ৪৪ বার তাঁর থেকে ওটিপি জেনে নেয় প্রতারক। দেড় ঘণ্টার মধ্যে ১৬ বারে অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ১৯ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৬৯ টাকা তুলে নেওয়া হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরেই ব্যাঙ্কে লেনদেন প্রক্রিয়া বন্ধ করেন সুনন্দিতারা। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশেরও দ্বারস্থ হন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুনন্দিতা বলেন, ‘‘এখনও ওই নম্বর থেকে ক্রমাগত ফোন আসছে। বুঝতে পারছি, নেটব্যাঙ্কিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’ প্রতারক কথা বলছিল বাংলায়।

হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক জন প্রবীণ নাগরিক এ ভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রতারকেরা ফোন করে ব্যাঙ্ক আধিকারিক সেজে ছলেবলে বিভ্রান্ত করেছে। কিছু ক্ষেত্রে এটিএমে সড়গড় না-হওয়ায় বিশ্বাস করে ঠকেছেন প্রবীণেরা। প্রতারিতদের আত্মীয়দের অনেকের সন্দেহের তির ব্যাঙ্কের দিকে। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যাঙ্কের তথ্য কী ভাবে পেয়ে যাচ্ছে প্রতারকেরা?

একাধিক ব্যাঙ্কের আধিকারিকের দাবি, ওই সন্দেহ অমূলক। তাঁদের বক্তব্য, প্রতারকেরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যায় প্রতারণার লক্ষ্যে। কোনও ক্ষেত্রেও বয়স্কেরা তার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের দাবি, আরও কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার জাল বিছোচ্ছে প্রতারকেরা। যেমন, অনেক সময় আধার কার্ড ল্যামিনেশন বা জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ‘চুরি’ যাচ্ছে। তা ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তথ্য জেনে যাচ্ছে প্রতারক। ফোন করে সেই তথ্য সামনে রাখায় সহজেই বিশ্বাস করে ঠকে যাচ্ছেন অনেকে। মোবাইলে আসা ওটিপি-ও বলে ফেলছেন। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, একটি অ্যাপের মাধ্যমে কর্মীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তাতে ওটিপি আদানপ্রদানও করা যায়। ওই অ্যাপ ব্যবহার করেও দুষ্কৃতীরা ফাঁদে ফেলছে
সাধারণ মানুষকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement