নিজস্ব চিত্র।
এক প্রৌঢ়কে অপহরণ করে রুপোর গয়না ছিনতাইয়ের ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশের দুই পুলিশকর্মী। ওই ঘটনায় এ বার গ্রেফতার করা হল এক ব্যক্তিকে, যিনি এক সময় কলকাতার কসবা থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার হাওড়ার জগাছার বাড়ি থেকে সৈকত চট্টোপাধ্যায় নামে ওই ব্যক্তিকে পাকড়াও করেছে বড়বাজার থানার পুলিশ। শুধু তাই নয়, ছিনতাই-কাণ্ডে বি-গার্ডেন থানার ওসির নামও জড়িয়েছে বলে খবর তদন্তকারীদের সূত্রে।
গত ৯ জুন বড়বাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের বাসিন্দা সমীর মান্না। অভিযোগে তিনি জানিয়েছিলেন, ওই দিন হাওড়া স্টেশনের কাছে বাস থেকে নামতেই তাঁকে অপহরণ করেছিলেন পুলিশের পোশাকে চার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। অভিযোগ, বছর পঞ্চান্নর সমীরকে একটি সাদা গাড়িতে তুলে নিয়ে যান ওই চার জন। এর পর তাঁকে নিউটাউনে বিশ্ব বাংলা গেটের কাছে নামিয়ে দিয়ে তাঁর হাতে থাকা রুপোর গয়নার ব্যাগ কেড়ে নেন অপহরণকারীরা।
সমীরের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেই চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। সমীর প্রথমে ভেবেছিলেন, পুলিশ সেজে চার দুষ্কৃতী তাঁকে অপহরণ করে গয়না ছিনতাই করেছেন। অভিযোগ দায়ের করার সময় পুলিশকে তেমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ বুঝতে পারে, এ যে সর্ষের মধ্যেই ভূত! কোনও ‘দুষ্কৃতী’ দল নয়, এই ঘটনায় আসল চোর পুলিশ নিজেই। অভিযোগ দায়ের হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই সাদা গাড়ির চালক বছর পঁয়ত্রিশের যুবক সঞ্জয়কুমার শাহকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করেই উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর নারায়ণপুরের বাসিন্দা ফিরোজ মণ্ডল এবং জয়নগরের আব্দুসালেম শেখ নামে দুই ব্যক্তির সন্ধান পায় পুলিশ। তাঁদেরও গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের জেরা করেই হাওড়া সিটি পুলিশের দুই কনস্টেবল সুরজিৎ সরকার এবং সমীরণ পাত্রকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা।
এর পর শুক্রবার জগাছার শেখ পাড়ার বাড়ি থেকে সৈকতকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, অতীতে কসবা থানায় সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করতেন সৈকত। অন্য একটি ঘটনায় সিবিআই সেজে অপহরণের অভিযোগে তাঁর চাকরি গিয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, সমীরকে অপহরণ এবং গয়না ছিনতাইয়ের ঘটনায় সৈকতও জড়িত। তদন্তে নাম উঠে এসেছে বি-গার্ডেন থানার ওসি পথিকৃৎ চট্টোপাধ্যায়েরও।
পুলিশ সূত্রে খবর, সমীরের মোট ১০ কেজি ৪০০ গ্রাম রুপোর গয়না ছিনতাই হয়েছিল। তার মধ্যে ফিরোজের কাছে উদ্ধার হয় ৪.৬ কেজি গয়না। বাকি গয়না পাওয়া গিয়েছিল হাওড়়া সিটি পুলিশের দুই কনস্টেবলকে জেরা করে। ওই দুই কনস্টেবলই দাবি করেন, এই ঘটনায় বি-গার্ডেন থানার ওসিও যুক্ত। এখন এই অভিযোগের সত্যমিথ্যা যাচাই করছেন তদন্তকারীরা। দুই কনস্টেবলের দাবি সত্যি হলে এই অপরাধ-চক্রের জাল বহু দূর বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছেন তাঁরা। ওই ওসিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লালবাজারের কর্তাদেরও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি পুলিশ সূত্রের।