রথযাত্রা উপলক্ষে সেজে উঠছে দোকান। কামারপুকুর চটিতে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ধীরে হলেও করোনা বাড়ছে হুগলিতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষকর্তারা ফের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার, দৈহিক দূরত্ব রেখে চলার অভ্যাসে ফিরতে বলছেন সাধারণ মানুষকে। এর মধ্যেই দিন কয়েক পরে রথযাত্রা। এই জেলার শ্রীরামপুরের মাহেশ এবং গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা বিখ্যাত। করোনা আবহে দু’বছর রথের রশিতে টান পড়েনি। এ বার দুই জায়গাতেই রথযাত্রা হচ্ছে, মেলাও বসছে। তাতে অসংখ্য মানুষের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বাড়তি ভিড়ে করোনা কি ছড়িয়ে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ পাবে?
যদি তা হয়, সে ক্ষেত্রে রথের ভিড়ে করোনার ছড়িয়ে পড়া আটকাতে জেলা প্রশাসনের কী ভাবনা, নাগরিকদের একাংশ সেই প্রশ্নও তুলছেন। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, পরিস্থিতি নিয়ে এখনও আশঙ্কার কিছু নেই। তবু, তাঁরা পরিস্থিতি হালকা ভাবে না নিতে চাইছেন না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইঞা বলেন, ‘‘বাইরে বেরোলে সবাই যাতে যথাযথ ভাবে মাস্ক ব্যবহার করেন এবং ঘন ঘন হাত ধোওয়ার অভ্যাস বজায় রাখেন, আমরা সেই আবেদন করছি। রথযাত্রায় বা মেলায় যাঁরা আসবেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই অনুরোধ করব।’’ তিনি জানান, রথযাত্রায় স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল টিম থাকবে।
বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবাইত সৌমেন অধিকারী বলেন, ‘‘করোনার জন্য গত দু’বছর রথের টান হয়নি। এ বার চিরাচরিত প্রথা মেনেই সব হবে। আশা করছি রথযাত্রায় ১০ লক্ষ ভক্তের সমাগম হবে।’’ প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, করোনা মোকাবিলায় বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহের তাপমাত্রা মাপা কার্যত অসম্ভব। দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব নয়। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘করোনা বিধি নিয়ে আলাদা কোনও নির্দেশিকা আমাদের কাছে আসেনি। তবে, মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা আমরা করব।’’ শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তী জানান, সবাই যাতে মাস্ক পরেন, সে ব্যাপারে মাইকে ঘোষণা চলবে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্বেচ্ছাসেবকরা মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার নিয়ে ঘুরবেন। কেউ মাস্ক না পরলে তাঁদের মাস্ক দেওয়া হবে। হাত স্যানিটাইজ় করে দেওয়া হবে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনের তুলনায় করোনা সংক্রমণ আরও কিছুটা বেড়েছে এই জেলায়। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জেলায় দৈনিক ২-৩ জন সংক্রমিত হচ্ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে সেই সংখ্যা গড়ে ৮-১০ জনে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার ২০ জনেরও বেশি মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। জেলায় মোট সংক্রমিত ৭০ জনের আশপাশে। তবে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, প্রায় সবাই উপসর্গহীন। এ দিন পর্যন্ত মাত্র এক জন হাসপাতালে ভর্তি। চণ্ডীতলার ওই রোগী সেখানকার ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করলেও জেলার প্রায় সর্বত্রই অধিকাংশ মানুষকে মাস্ক না পরেই বাইরে বেরোতে দেখা যাচ্ছে। শিকেয় ওঠা সচেতনতাই ভাবিয়ে তুলছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।