চিকিৎসা করাতে গাড়িতে চড়ে কলকাতা রওনা মালতী দাসের। —নিজস্ব চিত্র।
ভিক্ষা করে তাঁর দিন চলে কোনওক্রমে। সত্তরোর্ধ্ব সেই বৃদ্ধাই নিজের চিকিৎসার জন্য প্রায় এক লাখ টাকা তুললেন নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে!
হুগলির মগরার বোরোপাড়ার বাসিন্দা মালতী দাস। তিন কুলে কেউ নেই। পেশায় ভিক্ষোপজীবী। হুগলির বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির চত্বরে ভিক্ষা করেন মালতী। সম্প্রতি শরীর ভাল যাচ্ছিল না তাঁর। বৃদ্ধার বুকে দীর্ঘ দিন ধরেই একটি টিউমার বাসা বেঁধেছে। সেটা দিন কয়েক আগে ফেটে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মালতী। এর জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চলাফেরা করতেও অসুবিধা হচ্ছে। তাঁর দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মালতী জানিয়েছেন, চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। সে জন্য প্রয়োজন অর্থের। এই সময়েই সন্ধান মেলে মালতীর ‘গুপ্তধন’-এর। ভিক্ষা করে তিনি তিল তিল করে জমিয়েছিলেন প্রায় ৮৫ হাজার টাকা। তা রেখেছিলেন হুগলির সপ্তগ্রামের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। নিজের অ্যাকাউন্টে। বিপদে পড়ে সোমবার ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হন ওই বৃদ্ধা।
ব্যাঙ্কে মালতী দাস। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার তাঁর দুই পরিচিত মহিলাকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যান মালতী। তাঁর নামে প্যান কার্ড নেই। ফলে টাকা তোলা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে সমস্যা দেখা দেয়। সেই সময় সতীশ গুপ্ত নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক তাঁকে সাহায্য করেন বলে মালতীর দাবি। ওই ব্যাঙ্কে সতীশের অ্যাকাউন্ট থাকায় তিনি সাক্ষী হন। শেষ পর্যন্ত টাকা তুলতে পারেন মালতী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বালির বাসিন্দা সনিয়া সাউ। পরে সনিয়া বলেন, ‘‘আমার ঠাকুরমার বন্ধু মালতীদেবী। আমাদের বাড়িতে উনি যাতায়াত করতেন। অসুস্থ শুনে আমরা দেখতে এসেছি। চিকিৎসার জন্য যে টাকা প্রয়োজন তা ওঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে।’’ টাকা তোলার পর লাঠিতে ভর দিয়ে বৃদ্ধা গাড়িতে চড়ে রওনা দিয়েছেন কলকাতার উদ্দেশে। চিকিৎসার জন্য।