কুমারীপুজোয় সাহেবা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।
অষ্টমীর সকালে ধর্মীয় ভেদাভেদ ঘুচে গেল! মৃন্ময়ী মাতৃমূর্তির সামনে চিন্ময়ী রূপে পুজো পেল পাঁচ বছরের সাহেবা খাতুন। বুধবার হুগলির চুঁচুড়ার এক আশ্রমে ছোট্ট সাহেবার কুমারী মায়ের রূপ ধূসর করে দিল সাম্প্রদায়িক বিভেদকে।
এই প্রথম নয়, চুঁচুড়ায় ঝিঙেপাড়ার সারদা রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে এর আগেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশুকন্যাকে কুমারী হিসাবে পুজো করা হয়েছে। সাহেবার আগে গত চার বছর ধরে কুমারীর আসনে বসেছে তারই দিদি। আশ্রমের তরফে স্বামী দুর্গাত্মানন্দ মহারাজ জানিয়েছেন, রামকৃষ্ণের মতাদর্শে চালিত এই মঠ ভেদাভেদে বিশ্বাসী নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা রামকৃষ্ণের মতে পুজো করি। তাই ধর্মের বিভেদ করি না।’’ তিনি জানিয়েছেন, সনাতন শাস্ত্র মতে কুমারীর মধ্যে দুর্গা বসত করেন। মুনিঋষিরা সেই কুমারীর মধ্যে প্রকৃতি হিসাবে আরাধনা করতেন। প্রকৃতি অর্থাৎ নারী। সেই কুমারীর মধ্যেই মা দুর্গার আবির্ভাব হয়, বিশ্বাস অনেকের। মহারাজের কথায়, ‘‘অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে মহিষাসুর বিজয়ের পর দেবতারা মা দুর্গার বন্দনা করেছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের আশ্রমে কুমারীদের সেই মা দুর্গার কল্পনাতেই পুজো করা হয়। আমরা শ্রীরামকৃষ্ণের তত্ত্বের অনুসারী। ফলে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ মেনে চলি না। আমাদের মঠে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে কাজ করা হয়। এই কুমারী আজ আমাদের কাছে মা দুর্গা। অর্থাৎ মৃন্ময়ী প্রতিমার চিন্ময়ী রূপ।’’
মহাষ্টমীতে কুমারীপুজোর প্রথাও বেশ পুরনো। মহারাজ বলেন, ‘‘কাশ্মীরে এক মুসলিম মেয়েকে কুমারী রূপে প্রথম পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।’’ আশ্রমের পুজোয় ছোট মেয়েকে কুমারীর আসনে দেখে খুশি সাহেবার বাবা মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের পাঁচ বছর বয়স হবে। আগে কুমারীপুজোয় ওর দিদিকে বসানো হত। এ বার আমার ছোট মেয়ে সে আসনে বসেছে।’’
চুঁচুড়ার মতোই কামারপুকুরের রামকৃষ্ণ মঠেও অষ্টমীর তিথি মেনে কুমারীপুজো হয়েছে। তবে করোনা-আবহে তাতে সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। মঠের মহারাজ লোকত্তরানন্দজি বলেন, ‘‘চিরাচরিত প্রথা মেনে এ বারও মঠে কুমারীপুজো হয়েছে। কুমারীপুজো শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সে প্রথা মেনে রামকৃষ্ণ মঠের শাখা কেন্দ্রগুলিতেও এই পুজো হয়ে থাকে।’’