কেদারের হেলিপ্যাডে অপেক্ষায় পর্যটকেরা। সংগৃহীত ছবি।
উত্তরাখণ্ড বেড়াতে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুই জেলার অন্তত ২৬ জন আটকে পড়েছেন। কী করে ফিরবেন, সেটাই তাঁদের কাছে চিন্তার। উদ্বেগে তাঁদের পরিবার-পরিজনেরা।
হুগলির উত্তরপাড়ার মাখলা শীতলাতলার বাসিন্দা স্নেহাশিস ঘোষ স্ত্রী এবং তাঁদের মেয়ে-জামাই এবং মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার উত্তরাখণ্ড রওনা হন। ফোনে তাঁরা জানান, কেদারনাথ ঘুরে সোমবার তাঁরা বিনসর যান। সেখানেই হোটেলে আটকে রয়েছেন। হোটেলে খাওয়াদাওয়ায় সমস্যা হয়নি। তবে আরও কয়েক দিন আটকে থাকতে হলে খাবারে টান পড়তে পারে বলে তাঁদের চিন্তা। খারাপ আবহাওয়ার দোসর ঘনঘন লোডশেডিং। মঙ্গলবার পরিবারটি উত্তরপাড়ার পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান দিলীপ যাদবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টার জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলেছি।’’
মাখলায় বাড়িতে রয়েছেন স্নেহাশিসের শাশুড়ি যূথিকা পাল। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে দশমীর রাতে ফোনে জানায়, পৌঁছে গিয়েছে। পরের দু’দিনও কথা হয়। তার পরে দু’দিন ফোন করেনি। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে জানায়, ধস নামায় আটকে পড়েছে। আজ সকালে জানিয়েছে, সবাই ভাল আছে। তাতে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছি। সবাই সুস্থ শরীরে ফিরে আসুক।’’
উত্তরপাড়া এবং কোন্নগর শহরের ৪টি পরিবারের ১২ জন অষ্টমীর সকালে হরিদ্বারে পৌঁছন। তার পরে সীতাপুরে যান। বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে সোমবার তাঁরা জোশীমঠে ধসে আটকে পড়েন। সেখানে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয়। সেখান থেকে পাঠানো মোবাইলের ভিডিয়োতে এক মহিলা জানান, সোমবার অনেক জায়গায় ধস নামে। গাছ উপড়ে পড়ে। তার মধ্যেই রাতে গাড়িচালক কোনও রকমে তাঁদের জোশীমঠে নিয়ে যান। কিন্তু, সেখানে হোটেলে জায়গা, খাবার কিছুই মেলেনি। মুড়ি-চানাচুর খেয়ে রাত কাটাতে হয়।
ওই ভিডিয়োতেই সুদীপ্তা পাঠক নামে এক পর্যটক বলেন, ‘‘দুর্যোগের মধ্যে যে ভাবে রাতে জোশীমঠে পৌঁছেছি, বাড়ির লোক দেখলে শিউরে উঠবে। হোটেল পর্যটকে ভর্তি। অগত্যা গাড়িতেই মুড়ি খেয়ে রাত কাটাতে হল। তিন দিন এখানে বিদ্যুৎ নেই। দুঃসহ অভিজ্ঞতা। ফিরতে পারলে, বাঁচি।’’ এক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা, ‘‘পাহাড় থেকে এত জোড়ে জল পড়েছে, হেঁটে গেলে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে মনে হচ্ছিল। ওই রাতে জোশীমঠে হোটেল তো বটেই, শৌচাগারও জোটেনি।’’
চুঁচুড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী-মেয়ে সোমবার থেকে কেদারনাথে আটকে রয়েছেন। হেলিকপ্টারে ফেরার আশায় তাঁরা বুধবার ভোরে হেলিপ্যাডে পৌঁছে যান। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও দুপুরের পরে কালো মেঘে ছেয়ে যায়। কপ্টার ওড়া বন্ধ হয়ে যায়।
হাওড়ার বাগনানের এনডি ব্লকের ৫ জন দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে গাড়িতে নৈনিতাল রওনা হন। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বাড়ির লোকেরা ফোনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ওই দিন বেলা ১২টা নাগাদ শেষ বার ফোনে কথা হয়। তখন তাঁরা জানিয়েছিলেন, ধসের কারণে উত্তরাখণ্ডের পিথারাগোর এলাকায় আটকে আছেন। মোবাইলে নেটওয়ার্ক ভাল ছিল না। টিভিতে পাহাড়ি ধস এবং নদীতে জলস্ফীতির ছবি দেখে উদ্বিগ্ন পরিবারের লোকেরা চাইছেন, রাজ্য প্রশাসন তাঁদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করুক।