বিভিন্ন পুরসভার প্রকল্প রূপায়ণের বিষয়ে নজরদারির পাকাপাকি বন্দোবস্ত করছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। —ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন পুরসভার প্রকল্প রূপায়ণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে প্রায়শই। আর সেই সব দুর্নীতির দায় বর্তায় রাজ্য সরকারের উপর। এমনই সব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার কোন পুরসভায় কোন প্রকল্পে কত অর্থ খরচ হয়েছে, সেই বিষয়ে নজরদারির পাকাপাকি বন্দোবস্ত করছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে কবে, কোন খাতে, কত পরিমাণ অর্থ পুরসভাগুলিতে খরচ করা হয়েছে, তা উঠে আসবে রাজ্যের নির্দিষ্ট পোর্টালে। পুর দফতরের তরফে পুরসভাগুলির এই হিসাব নেওয়ার ক্ষেত্রে দু’টি পৃথক মডিউল তৈরি করা হচ্ছে। একটি রাজ্যের কোষাগার থেকে দেওয়া টাকার জন্য। অন্যটি কেন্দ্রীয় সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্প বাবদ বরাদ্দ অর্থের হিসাব রাখার জন্য। কারণ রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের দেওয়া অর্থে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হয়ে থাকে। তাই নজরদারির জন্য এই মডিউল অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। কোনও রকম আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে যাতে দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা যায় তাই অর্থ দফতরের আইএফএমএস পোর্টালের সংযুক্তিকরণও করা হচ্ছে।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ নিয়েই পরিকল্পনা খাতে এক অর্থবর্ষে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। বেশির ভাগ অর্থ খরচ হয় পুরসভার মাধ্যমেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, সব পুরসভা সেই অর্থগুলি সঠিক কাজে ব্যয় করুন। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় রাজ্য সরকারকে তার দায় নিতে হয়েছে। তাই এ বার নজরদারি করে প্রকল্পের টাকা সঠিক জায়গায় খরচ করার পাশাপাশি, দুর্নীতি রুখতেই রাজ্য এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।” এ ছাড়াও আরও একটি বিশেষ কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছে নবান্নের একটি সূত্র। সম্প্রতি ক্যাগের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) দেওয়া হয়নি তাদের। ক্যাগের অভিযোগ নস্যাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানিয়েছিলেন, রাজ্য সমস্ত ইউসি জমা দিয়েছে। সাংবাদিক বৈঠক করে নথি দেখিয়ে সেই একই কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক।
তাই এই অভিযোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পদ্ধতিতে ইউসি জমা হবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে। পুর দফতর সূত্রে খবর, ১ এপ্রিল আগামী অর্থবর্ষ থেকেই নতুন এই পদ্ধতি চালু হয়ে যাবে। নতুন এই প্রক্রিয়ায় ইউসি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা থাকবে না বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তা পোর্টালে আপলোড করলেই ইউসি স্বয়ংক্রিয় ভাবে যথাস্থানে চলে যাবে। ফলে ক্যাগের তরফেও ইউসি জমা না দেওয়ার অভিযোগ তোলার কোনও সুযোগ থাকবে না। তাতে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এক দিকে দুর্নীতি দমন করতে যেমন পুরসভাগুলিতে সরাসরি নজরদারি করতে পারবে পুর দফতর, তেমনই ক্যাগের তরফে অভিযোগ তোলার আগেই সব প্রকল্পের ইউসি সঠিক সময়ে জমা করা যাবে।