গ্রামের বাসিন্দারাই নিজেদের উদ্যোগে আটি গনেশপুর বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবটি তৈরি করেছিলেন। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় হুগলির একটি ক্লাবকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার পরই সে ক্লাবঘর ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিল তৃণমূল পঞ্চায়েত। এই অভিযোগই উঠেছে হুগলির ধনেখালিতে। ওই নির্দেশকে ঘিরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পোলবা-দাদপুর ব্লকের বাবনান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আটি গনেশপুর গ্রামে নব্বইয়ের দশকে ওই ক্লাবের পাকা ঘর তৈরি হয়েছিল। গ্রামের বাসিন্দারাই নিজেদের উদ্যোগে আটি গনেশপুর বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবটি তৈরি করেছিলেন। গ্রামের এক জনের জমিতে তা গড়ে ওঠে। ১৫ জুন সাংসদ তহবিল থেকে ওই ক্লাবকে একটি আম্বুল্যান্স দান করেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ, তার পরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের রোষের মুখে পড়তে হয় ওই ক্লাবকে।
বিজেপির থেকে কেন অ্যাম্বুল্যান্স নেওয়া হল, এ নিয়ে কথা শুনতে হয় বলে ক্লাবের সদস্যদের অভিযোগ। ক্লাব সভাপতি গৌতম সিংহ রায় বলেন, ‘‘গ্রামে দীর্ঘ দিনের এই ক্লাব বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। হঠাৎ করে দেখলাম, সাংসদ একটি অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার পরেই ক্লাব ভেঙে দেওয়ার জন্য আমাদের পঞ্চায়েত থেকে ১৭ তারিখ একটি নোটিস ধরানো হল। তাতে বলা হয়েছে, এই ক্লাব তৈরির অনুমোদন নেই। ওয়েস্ট বেঙ্গল পঞ্চায়েত অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী, পঞ্চায়েত আইনের ধারা ২৩ নম্বর ধারার ৬ উপধারায় ‘এনওসি’ না থাকায় ক্লাবঘর ভেঙে সরিয়ে ফেলতে হবে। নোটিস পাওয়ার দশ দিনের মধ্যে এ কাজ করার কথা বলা হয়েছে।’’
নোটিস পাওয়ার পর ক্লাব ভাঙার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ক্লাব সভাপতি গৌতম সিংহ রায়ের অভিযোগ, ‘‘যে হেতু বিজেপি সাংসদ অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছেন, তাই তৃণমূলের সেটা সহ্য হচ্ছে না। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তো তৃণমূল বা বিজেপি ভেদাভেদ নেই। যে কেউ অসুস্থ হলেই তাঁকে পরিষেবা দেওয়া হয়।’’
গোটা ঘটনায় বিজেপি-তৃণমূলে তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তুষার মজুমদারের বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য সাংসদ তহবিলের অর্থ বার করা হয়েছে। ক্লাব অ্যাম্বুল্যান্স পেয়েছে বলে ক্লাবঘর ভাঙার নির্দেশ। এটা কি তালিবানি শাসন চলছে? নাকি আমরা খাপ পঞ্চায়েতের অধীনে রয়েছি? ধনেখালির বিধায়ককে অনুরোধ করব যেখানে সাধারণ মানুষের পরিষেবার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে, সেখানে রাজনীতি না করতে।’’ তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাবনান গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান শেখ আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছে বলে ক্লাব ভাঙার কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। মিথ্যে রটনা করছে বিজেপি। যাঁর জমিতে ক্লাব ছিল, তিনি অভিযোগ করেছেন। প্রশাসন থেকে ক্লাব ভেঙে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সে নির্দেশ ক্লাবকে জানিয়েছে। এখানে পঞ্চায়েতের কোনও ভূমিকা নেই। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সোমবার ক্লাব কর্তৃপক্ষকে পঞ্চায়েতে ডাকা হয়েছে।’’