Pandal Controversy

হিন্দু মহাসভার রাবণের দুই মুখ যেন মোদী-শাহ!

শহরে ওই পুজোর উদ্যোক্তা অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর আদলে অসুর রেখে গত বছর তারা বিতর্ক ডেকে এনেছিল। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল পুলিশকে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৪৫
Share:

হিন্দু মহাসভার রাবণ দহনে ১০ মাথা। —নিজস্ব চিত্র।

পুজো এলেই কাক এসে বসছে রুবি মোড়ের এক মণ্ডপে আর তাল পড়ে যাচ্ছে! যাকে বলে কাকতালীয়!

Advertisement

শহরে ওই পুজোর উদ্যোক্তা অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর আদলে অসুর রেখে গত বছর তারা বিতর্ক ডেকে এনেছিল। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল পুলিশকে। এ বার থানা-পুলিশ হয়নি ঠিকই। তবে এ বারের গোটা থিমই চাঞ্চল্যকর। মণ্ডপে ঢোকার মুখে ‘উলঙ্গ রাজা’র অবয়বে বিরাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আদলে দু’টি মুখ। দশমীর সন্ধ্যায় পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে যে রাবণ দহন হয়েছে, তার দু’টি মাথাও মোদী ও শাহের মতো! গান্ধীজির সময়ে উদ্যোক্তাদের দাবি ছিল, ওই মিল ‘কাকতালীয়’! এ বারও দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই রাজনীতিকের আদলে রাবণের দু’টি মাথা তাঁদের মতে ‘নেহাতই কাকতালীয়’!

কাক এবং তালের যোগাযোগ যতই দেখানোর চেষ্টা হোক, বিতর্কের আঁচ তাতে চাপা পড়ছে না। কারণ, হিন্দু মহাসভার রাজ্য নেতৃত্ব এই পুজোর মাধ্যমে দাবি তুলেছেন, এনআরসি-র ‘প্রতারণা’ বন্ধ করে মতুয়া-সহ সনাতনী মানুষকে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে। এনআরসি নামক কৃতকর্ম থেকে সরে না এলে মোদীকে গদি ছাড়তে হবে, সরাসরি এই কথা বলতেও কসুর করছেন না তাঁরা! বিজেপি অবশ্য মনে করছে, হিন্দু মহাসভার এই উদ্যোগের নেপথ্যে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় মদত আছে। আর মদতের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, মোদী সরকার তথা বিজেপির ‘মুখোশ’ এ বার হিন্দু-সহ সব অংশের মানুষের কাছেই খুলে পড়ছে!

Advertisement

এক কথায় বলতে গেলে, রুবি মোড়ের ওই পুজোর আয়োজন থেকেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি দিয়েছে হিন্দু মহাসভা। মতুয়া-সহ সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের কাছে নাগরিকত্ব বরাবরই বড় বিষয়। বিজেপি যে কারণে এনআরসি-সিএএ প্রসঙ্গ প্রয়োজন মতো সামনে আনে। এর পরে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলন শুরু করার কথা বলছে হিন্দু মহাসভা। পুজোয় এ বার তারা প্রথাগত অসুর রাখেনি। রামের অকাল বোধনের সূত্রে রাবণ আছেন। এবং সেখানেই দেশের দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিল। হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামীর কথায়, ‘‘ওই মিল নেহাতই কাকতালীয়। মোদী বা শাহ তো কানে দুল, কপালে তিলক পরে রাজনীতি করেন না।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে মেঘের আড়াল থেকে নয়, একটা কথা সরাসরি বলতে চাই। একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কৃতকর্মের জন্য তাঁদের ঘৃণার আগুনে পুড়তে হবেই! ওই দল যখন সনাতনী হিন্দুত্বের কথা বলে তার পরে সনাতনীদের এনআরসি-র লাইনে দাঁড় করায়, তখন ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশও হবে। আমাদের এনআরসি-র প্রতীকী রাবণ দহনের বার্তা এটাই।’’ অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পে সনাতনীদের আটক করা, মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবি নিয়ে ‘খেলা করা’র উদাহরণ টানছেন চন্দ্রচূড়েরা।

হিন্দু মহাসভার এই ভূমিকাকে আক্রমণের পথেই যাচ্ছে বিজেপি। রাজ্যে দলের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কোন হিন্দু মহাসভা এটা? যারা সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, এন সি চট্টোপাধ্যায়দের ভাবনার সঙ্গে প্রতারণা করে পয়লা বৈশাখকে বাংলা দিবস ঠিক করার বৈঠকে চলে গিয়েছিল! গান্ধীজি’র আদলে অসুর হয়েছিল বলে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছিল। এ বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চরম অসম্মান করা হচ্ছে দেখেও পুলিশকে হাত গুটিয়ে বসিয়ে রাখা হল? এ তো তৃণমূলের পয়সায় দোকানদারি হচ্ছে! এখন মনে হচ্ছে, অসুর-কাণ্ডটাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ঘটানো হয়েছিল।’’

তৃণমূলের রাজ্য নেতা তাপস রায়ের পাল্টা মত, ‘‘সব কিছুতেই তৃণমূলকে দায়ী করা ওঁদের অভ্যাস! কিন্তু এটা তো সত্যি কথা যে, রামের নাম করে আর হিন্দুত্বের কথা বলে কত দিন চলবে? মতুয়াদের নাগরিকত্ব হোক বা নানা অংশের মানুষের বিভিন্ন সমস্যার বাস্তবিক সমাধান চাই। এত প্রতারণা ওঁরা করেছেন, সনাতনী-সহ সব মানুষের কাছেই ওঁদের মুখোশ এ বার খুলে পড়ছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement