অর্ধেক ডিম দিয়েই ভাত মেখে খাচ্ছেন মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকারের ‘মা’ প্রকল্পে দ্বিতীয় দিন সাধারণ মানুষের পাতে পড়ল অর্ধেক ডিম! তবে সর্বত্র নয়, হুগলির চন্দননগরের একটি ক্যান্টিনে খেতে আসা মানুষরাই শুধুমাত্র অর্ধেক ডিম পেয়েছেন বলে অভিযোগ। এবং এই বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের নেতাদের ‘কাটমানি’ যাতে বাদ না যায়, তার জন্যই গরিব মানুষকে অর্ধেক ডিম খেতে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপি-র। যদিও লোক কম হওয়ায় খরচে লাগাম টানতেই অর্ধেক ডিম দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে চন্দননগর পুরসভা।
সোমবার নবান্ন থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের ২৭টি জেলায় ‘মা’ প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধাপে ধাপে রাজ্যের সর্বত্র এই প্রকল্প চালু হবে বলে জানান। মুখ্যমন্ত্রীর জানান, এই প্রকল্পের আওতায় মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে পেটভরে খেতে পারবেন দুঃস্থ মানুষরা। গোটা ব্যাপারটার দেখভাল করবে বিভিন্ন পুরসভা। নামমাত্র খরচে এমন সুষম খাবার চেষে দেখতে প্রথম দিনেই ভিড় উপচে পড়ে বিভিন্ন জায়গায়। সোমবার গোটা ডিম দিয়েই ভাত মেখে খেয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন সকলে।
কিন্তু মঙ্গলবার, প্রকল্পের দ্বিতীয় দিন চন্দননগরেই তাল কাটে। এ দিন সেখানে রবীন্দ্রভবনের ‘জাহ্নবী’ ক্যান্টিনে খাবার ব্যবস্থা হয়। রান্নার দায়িত্বে ছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠী। কিন্তু একে একে ভাত, ডাল এবং সব্জির পর যখন ডিমের পালা আসে, তখন দেখা যায় পাতে অর্ধেক ডিম পড়ছে। ডিম-ভাতের টানে খেতে এসে কারও কারও মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। তবে অর্ধেক ডিমই তৃপ্তিভরে খেতে দেখা যায় অনেককে। কুঠির মাঠ থেকে খেতে আসা দীননাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘খুব ভাল খাবার দেওয়া হয়েছে। ডিমটা গোটা হলে ভাল হত। তবে পেট ভরে ডাল, ভাত, সব্জি খেয়েছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা চৈতালী চৌধুরী বলেন, ‘‘এ ভাবে পেট ভরে খেতে পারলে আমাদের মতো গরিব মানুষদের সুবিধাই হয়।’’
এই অর্ধেক ডিম নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল বলেন, ‘‘১০০ কোটি টাকার বাজেট রেখে এখন অর্ধেক ডিম দিচ্ছে। অথচ প্রচার হচ্ছে, ৫ টাকায় গরিবদের ডিম-ভাত খাওয়াচ্ছে সরকার। বাকি ডিম কোথায় যাচ্ছে? শাসকের পেটে?’’
যদিও চন্দননগর পুর নিগমের প্রশাসক স্বপন কুন্ডুর যুক্তি, ‘‘মা প্রকল্পে সরকার ১০ টাকা দিচ্ছে। কুপন সংগ্রহকারী দিচ্ছেন ৫ টাকা। এই ১৫ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার দিতে বলা হয়েছে। তাতে ভাত, ডাল, তরকারির সঙ্গে ডিম রাখতেই হবে। সরকারের তরফে প্রতি দিন ৫০০ জনকে খাওয়ানোর লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হলেও, এ দিন মোটে ৫০ জনই কুপন সংগ্রহ করেন। এত কম সংখ্যক লোককে গোটা ডিম দিলে সঙ্কুলান হবে কী করে? যাঁরা ক্যান্টিন চালাচ্ছেন, তাঁদেরও তো খরচে পোষাতে হবে? ’’