কানহাইয়া কুমার। —ফাইল চিত্র।
দলবদলের স্রোতে এ বার কি তিনিও গা ভাসাচ্ছেন? দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা তথা সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমারকে নিয়ে এমন জল্পনাতেই এ বার সরগরম দেশীয় রাজনীতি। রবিবার বিহারে নীতীশ কুমার ও বিজেপি-র জোট সরকারের মন্ত্রী অশোক চৌধরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তার পর থেকেই কানহাইয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জোর চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিহারের রাজনৈতিক মহলে। দেশদ্রোহ মামলায় আগামী ১৫ মার্চ দিল্লির পটিয়ালা হাউস কোর্টে হাজিরা দেওয়ার কথা প্রাক্তন ছাত্র নেতার। তার আগে বিহারে বিজেপির শরিক সংযুক্ত জনতা দলের (জেডিইউ) প্রতিনিধির সঙ্গে কানহাইয়ার এই সাক্ষাৎ তাই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। তবে কানহাইয়ার দলবদলের জল্পনার পিছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটি কাজ করছে, তা হল সিপিআই নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ক্রম অবনতি।
ছাত্র রাজনীতির আঙিনা পার করে সিপিআই-এর হয়ে ২০১৯ সালে জাতীয় রাজনীতিতে পা রাখেন কানহাইয়া। বিহারের বেগুসরাই কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে বিজেপি-র গিরিরাজ সিংহের কাছে হেরে যান।
সূত্রের খবর, গত ১ ডিসেম্বর হায়দরাবাদ সিপিআইয়ের অফিস সচিব ইন্দু ভূষণ পটনা সফরে এলে কানহাইয়া তাঁর সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেন বলে অভিযোগ। তার জেরে হায়দরাবাদ সিপিআই-এ কানহাইয়ার বিরুদ্ধে ‘কড়া পদক্ষেপ’ করার জন্য প্রস্তাবও পাশ হয়। তার পর থেকেই দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কানহাইয়ার সম্পর্ক ক্রমশ ‘তিক্ত’ হয়েছে।
শুধুমাত্র দলীয় নেতারাই কানহাইয়ার উপর ‘রুষ্ট’ নন, ছাত্র রাজনীতিতে একসময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যাঁদের সঙ্গে লড়াই করেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশও কানহাইয়ার প্রতি ‘অসন্তুষ্ট’ বলে জানা গিয়েছে। কারণ ছাত্র রাজনীতি থেকে মূলস্রোতের রাজনীতিতে পা রাখার এই দীর্ঘ সময়ে লাগাতার নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনায় সরব হলেও, গত এক বছর যাবৎ তাঁর নীরবতা চোখে পড়ার মতো। অর্থনৈতিক সঙ্কট, এক সময়ের সতীর্থ উমরের গ্রেফতারি, কৃষি আন্দোলন, একের পর এক সমাজকর্মীর গ্রেফতারি, কোনও কিছু নিয়েই সাম্প্রতিক কালে সে ভাবে মুখ খুলতে দেখা যায়নি তাঁকে। সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে টুইট করে গেলেও আগে যেমন একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যেত তাঁকে, তা চোখে পড়েনি।
এমনকি বাম শিবিরের নেতারা দফায় দফায় দিল্লি সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে দেখা করলেও, এক বারও সেখানে দেখা যায়নি কানহাইয়াকে। জেএনইউয়ের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেও তাঁকে একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু কারও ডাকেই সাড়া দেননি তিনি। তাই সব মিলিয়ে কানহাইয়ার দলবদলের জল্পনা আরও বেশি করে মাথাচাড়া দিচ্ছে।
শুধু কানহাইয়া নন, নীতীশের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসা লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) সাংসদ চন্দন সিংহের সঙ্গে জেডিইউয়ের নয়া সমীকরণ নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। কানহাইয়ার পর সোমবার তিনিও পটনায় অশোকের সঙ্গে দেখা করেন। দলের প্রধান চিরাগ পাসোয়ানের সঙ্গে তাঁর মতভেদের খবর বেশ কিছু দিন ধরেই ঘুরছে বিহারের রাজনীতিতে। চন্দন যদিও অশোকের সঙ্গে দেখা করাকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে দুই তরুণ নেতার নীতীশের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়াটাকে হালকা ভাবে নিতে নারাজ বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা।
এখনও পর্যন্ত কানহাইয়া এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে জেডিইউ মুখপাত্র রাজীব রঞ্জনের বক্তব্য, ‘‘আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও ভিন্ন দলের নেতাদের সাক্ষাৎ অস্বাভাবিক কিছু নয়।’’ কানহাইয়ার দলবদলের সম্ভাবনার কথা জানতে চাইলে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।