রাজ্যে স্কুল খুলেছে মঙ্গলবার। শহরতলির একটি স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের সেই পুরনো ছবি ফিরল আবার। ছবি: পিটিআই।
দীর্ঘ দিন পর চেনা মানুষটিকে দেখে এক গাল হেসে সুব্রতর দিকে এগিয়ে গেলেন শোভন, ‘‘কী রে, ছেলেকে দিতে এসেছিলিস নাকি!
“আরে, শোভন যে! বাব্বা এ ক’মাসে কেমন যেন মুটিয়ে গেছিস দেখছি।’’
‘‘কত দিন দেখা হয়নি বলো! খবর কী?’’ সুব্রতর দিতে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন শোভন।
‘‘এই তো, স্কুল খুলল, ছেলেকে দিতে এসেছিলাম।’’ বললেন সুব্রত।
শোভন-সুব্রত দু’জনেরই ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেদের ভর্তি করতে আসার সুবাদে দু’জনের পরিচয়। সেই থেকে গাঢ় হয়েছে বন্ধুত্ব। স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা, এক সঙ্গে গল্প করা কত কী করেছেন দুই বন্ধু। কিন্তু করোনা যেন সেই চেনা ছককে ভেঙে দিয়েছিল।
প্রায় আঠারো মাস পর শোভনকে দেখে তাই একটু রসিকতা করেই সুব্রত বলেছিলেন, ‘‘বাহ! বেশ গোলগাল হয়ে গেছিস তো।’’ পাল্টা মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছিলেন শোভনও। ‘‘তোর তো দেখছি মাথায় প্রায় ময়দান হয়ে গিয়েছে!’’ স্কুল খুলতেই অভিভাবকদের মধ্যে রসিকতা, গল্প— এই চেনা ছবিটা ফিরে এল।
মঙ্গলবার অভিভাবকদের ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বটে, তবে দীর্ঘ সময়ের পর পড়ুয়াদের মতো তাঁদের মধ্যেও একটা উচ্ছ্বাস ধরা পড়েছে। পড়ুয়া তো বটেই, অভিভাবকদের সেই নিত্য একটা অভ্যাস— ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া। তার পর স্কুলের বাইরে বাকি অভিভাবকদের সঙ্গে অপেক্ষা করা। গল্প, আড্ডা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা— আবার সেই ছকে বাঁধা রুটিনে ফিরতে পারাটা যেন তাঁদের কাছেও একটা বড় পাওনা। স্কুল খোলার আগে থেকেই পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা হাজির ছিলেন। গেটের সামনে থেকে এক এক করে পড়ুয়াদের ঢোকানো হচ্ছিল। দেহের তাপমাত্রা মাপা, হাত স্যানিটাইজ করার পরই ক্লাসঘরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের।
শিক্ষাব্যবস্থাকে একেবারে ওলটপালট করে দিয়েছে কোভিড। পাশাপাশি নতুন একটা ব্যবস্থার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছে পড়ুয়ারা। সেটা হল অনলাইন ক্লাস। কিন্তু এই অনলাইন ক্লাসের চেয়ে সশরীরে স্কুলে হাজির থেকে ক্লাস করা, শিক্ষক, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা— এই পরিবেশটাই তাঁদের কাছে এনেক বেশি শ্রেয়। মঙ্গলবার এমনই জানিয়েছে পড়ুয়ারা। তবে পড়ুয়ারা যেমন স্কুল খোলা নিয়ে উচ্ছ্বসিত অভিভাবকদের মধ্যেও একটা উচ্ছ্বাস ধরা পড়েছে।
স্কুলে এসে ক্লাস করাটাকে তাঁরা বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। বাড়িতে থেকে ছেলেমেয়েদের মোবাইলের আসক্তি বেড়ে যাচ্ছিল। স্কুল খোলায় তাঁরা খুব খুশি। অনেক দিন ঘরে বন্দি থাকায় পড়ুয়াদের যেমন মন খারাপ হচ্ছিল, তেমনই অভিভাবকদের। ছেলেমেয়েদের স্কুলে দিতে দিতে এসে আবার সব অভিভবকরা মিলিত হতে পেরে খুব আনন্দিত জানিয়েছেন কিশোর ভারতীর এক অভিভাবক।
অভিভাবকদের অনেকেই বলেন, “কোভিডের কারণে ছেলেমেয়েরা ঘরবন্দি হয়ে গিয়েছিল। ফোনে ফোনেই সব কথাবার্তা চলত। কিন্তু এখন স্কুলে আসতে পেরে তারাও খুব খুশি। আমরা অভিভাবকরাও আবার এক সঙ্গে হতে পেরে বেশ ভাল লাগছে।”