Mamata Banerjee Giriraj Singh

অনিল কপূর হাত টেনে তুললেন! ‘নাচ’ নিয়ে মন্তব্য মমতার, গিরিরাজের নাম শুনেই উগরে দিলেন বিরক্তি

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজের বক্তব্য নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের মহিলা নেত্রীরা। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কদর্য আক্রমণ’ হতাশার বহিঃপ্রকাশ বলে বর্ণনা করেছেন তাঁরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৮
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গিরিরাজ সিংহ (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে ‘নাচলেন’, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। উত্তরবঙ্গ পৌঁছে ‘নাচের’ নেপথ্য কারণ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। আর গিরিরাজের নাম শুনেই উগরে দিলেন তীব্র বিরক্তি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গিরিরাজ হলেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। যাঁর সঙ্গে কেন্দ্রের বকেয়া অর্থ নিয়ে তৃণমূলের টানাপড়েন চলছে। গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করতে নয়াদিল্লিতে তাঁর দফতরেও এক বার গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের অন্য সাংসদেরা। গিরিরাজ তখন দফতরে ছিলেন না। তাঁর সচিবের সঙ্গে কথা বলে চলে আসতে হয়েছিল অভিষেকদের। তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, আগে থেকে সময় নেওয়া থাকলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ‘ইচ্ছাকৃত’ ভাবেই তাঁদের এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ওই সময়ে দফতরে ছিলেন না। অর্থাৎ, গিরিরাজ-তৃণমূল ‘সম্পর্ক’ আগে থেকেই সুবিদিত।

বুধবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মমতা। বাগডোগরায় পৌঁছনোর পর তাঁকে নাচ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি নাচ জানি না। আমি আদিবাসীদের সঙ্গে নাচি। ওঁদের সমর্থন করার জন্য। এখানে (চলচ্চিত্র উৎসবে) সে সব হয়নি।’’ এর পরেই তিনি হেসে ফেলে বলেন, ‘‘অনিল কপূরজি আমায় হাত ধরে টানলেন। আমরা বলিউডকে সম্মান করি। এটা ছিল সম্মান প্রদর্শন। আর কিছু না।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিতে কী ভাবে চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে? কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নাচছেন? জবাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কে? ছাড়ুন তো ওদের কথা!’’

Advertisement

বুধবার সকালে সংসদের অধিবেশনের ফাঁকেই গিরিরাজ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য দুনিয়ায় রয়েছেন। বাংলায় যখন গরিবের অধিকার কেড়ে নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, তখন উনি ঠুমকা লাগাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। উচিত নয়।’’ প্রসঙ্গত, ‘ঠুমকা’ নৃত্যশৈলীর একটি মুদ্রা। তবে তা সাধারণত খুব ‘প্রশংসাসূচক’ অর্থে প্রয়োগ করা হয় না। সেই সূত্রেই গিরিরাজের মন্তব্য শুনে অনেকের মনে হয়েছে, মমতাকে তির্যক আক্রমণ করতেই এ হেন শব্দ ব্যবহার করেছেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার এই সদস্য। শুধু তা-ই নয়, ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিজের শরীরও দোলাচ্ছেন গিরিরাজ।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের মহিলা মন্ত্রী এবং সাংসদেরা। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘‘এটা বিজেপির নারীবিদ্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তিন-তিন বার তিনি মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। কারও দয়ায় নয়। তাই গিরিরাজ সিংহকে জ্ঞান দিতে হবে না কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত।’’ মহুয়া আরও বলেন, ‘‘বিজেপি বাংলায় পা রাখতে পারছে না বলেই এই সব কদর্য আক্রমণ করছে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে।’’ একই ভাবে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেবরাও গিরিরাজের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

এর আগে আদিবাসীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের নৃত্যের সঙ্গে পা মেলাতে দেখা গিয়েছে। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে তাঁকে রাজ্য সরকারের তরফে যে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুষ্ঠানেও আদিবাসী নৃত্যে পা মেলাতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। মঙ্গলবার ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে যে সময়ে অরিজিৎ সিংহের গাওয়া থিম সং বাজছিল, তখন মঞ্চে সলমন খান থেকে অনিল কপূর, মহেশ ভট্টদের নাচতে দেখা যায়। সেই সম্মিলিত নাচে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি শুধু দু’টি হাতই দুলিয়েছেন। তাঁকে ঠিক ‘নাচ’ বলে অভিহিত করা যায় না। তবে তা নিয়েই বুধবার কিছুটা আগল-ভাঙা আক্রমণ শানান গিরিরাজ। নাচের ব্যাপারে হালকা চালে অনিল কপূরের প্রসঙ্গ বলেছিলেন মমতা। কিন্তু গিরিরাজের নাম শুনেই তিনি দৃশ্যতই বিরক্তি প্রকাশ করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement