(বাঁ দিকে) সুচেতন ভট্টাচার্য এবং (ডান দিকে) অন্বেষা মণ্ডল।
সুচেতন হয়েছেন সুচেতনা ভট্টাচার্য। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন নিয়ে ‘চেতনা’ কি তৈরি হয়েছে? পুরুলিয়া শহরের অন্বেষা মণ্ডলের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে। ছিলেন সুমন, এখন লিঙ্গ পরিবর্তন করে অন্বেষা হয়েছেন। এখনও কটূক্তি, বিদ্রূপ, ব্যঙ্গ তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। অদম্য জেদে সে সব উপেক্ষা করেন অন্বেষা। অন্য রূপান্তরকামীদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘ভয় ভেঙে পথে নেমে পরিস্থিতির মোকাবিলা করুন।’’
সম্প্রতি বেসরকারি একটি বিনোদন চ্যানেলে অন্বেষার গান প্রশংসা কুড়িয়েছে। বর্তমানে তিনি কলকাতাবাসী। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনার লিঙ্গ পরিবর্তনের উদাহরণ তিনি সকলকে দেন ইদানীং। অন্বেষা বলেন, ‘‘যাঁরা ওঁর মতো এগিয়ে আসতে চান, তাঁদের চেতনা হোক।’’ অন্বেষা মনে করেন, ‘‘কোনও মেয়ে (রূপান্তরকামী) যদি মনে করেন, তিনি ছেলেদের মতো যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা হলে সমাজের পরোয়া না করে নিজের মনের কথা শুনুন।’’ তার পরেই শোনান সুমন থেকে অন্বেষা হয়ে ওঠার কাহিনি।
অন্বেষার বয়স যখন পাঁচ, তখন তাঁর বাবা আদ্রা থেকে বদলি হয়ে আসেন পুরুলিয়া শহরে। সুমন পড়তেন পুরুলিয়া জেলা স্কুলে। ধীরে ধীরে শরীরে নারী অভিব্যক্তি প্রকাশ পেতে থাকে তাঁর। তৈরি হয় প্রতিকূল পরিস্থিতি। পরে অন্বেষা চলে আসেন কলকাতায়, তাঁর এক বান্ধবীর কাছে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। অন্বেষা জানান, ২০১৪-এ কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন বিহারে। সেখানেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে অগত্যা ফিরে আসতে হয় কলকাতায়। অন্বেষা বলেন, “মেয়েদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য এবং অশ্লীল ইঙ্গিত করার প্রবণতা আগেও ছিল। এখনও আছে। স্কুলে পড়ার সময় অনেক বিদ্রূপ সইতে হয়েছে।’’ শরীরে নারী অভিব্যক্তি প্রকাশের পরেই সিদ্ধান্ত নেন, নারী পরিচয়েই বাঁচবেন। ২০১৪ থেকে সুমন থেকে অন্বেষা হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চিকিৎসা প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। কল সেন্টারে কাজ করা থেকে টুকটাক ব্যবসা— সবই করেছেন তিনি।
ঘনিষ্ঠ জনেরা পাশে দাঁড়াননি। তবু অন্বেষার প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য নয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রচুর বন্ধু-বান্ধব-অভিভাবক আছেন, যাঁরা আমাকে ভালবাসেন। এখন গানের জন্যও অনেকে চেনেন আমাকে।’’ শেষে জুড়লেন, ‘‘আমার মতো যাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন, তাঁরাও চাইলে নিজের মতো করে বাঁচতে পারেন। শুধু লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।’’