কলকাতায় ‘রেড বুক ডে’ উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিজে দলের গুরুদায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কঠিন লড়াইয়ে নতুন মুখ সামনে রেখেই এগোতে হবে বলে এ বার জোরালো সওয়াল করলেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব। তাঁর মতে, তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে নতুন নতুন ভাবনা উঠে আসছে। আধুনিক সময়ের ভাষায় যোগাযোগ গড়ে তুলতেও পারদর্শী তারা। সংগঠন সাজানো হোক বা আসন্ন পুরভোটে প্রার্থী বাছাই— নতুন মুখে ভরসা রাখার বার্তাই দিচ্ছেন গৌতমবাবু।
কলকাতায় ‘রেড বুক ডে’ উদযাপনের অনুষ্ঠানে শুক্রবার গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে আমাদের। কমবয়সিদের আমরা জায়গা দিচ্ছি। আন্দোলনে পথ দেখাচ্ছে ছাত্র-যুবরা। নতুন নতুন স্লোগান তারা তুলে আনছে, এখনকার সময়ের ভাষায় তারা কথা বলছে। কারও পছন্দ হোক বা না হোক, নতুনদের জায়গা দিতেই হবে!’’ অনুষ্ঠানের পরেও তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বামেদের কর্মসূচিতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ এবং সংগঠনে তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে। আসন্ন পুরভোটে যুব প্রজন্মের মধ্যে থেকেই বেশির ভাগ প্রার্থী বেছে নিতে চান তাঁরা। কিন্তু সিপিএম-সহ বাম দলগুলির অন্দরে এখনও তো তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দিতে নানা ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে? গৌতমবাবুর বার্তা, তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে ভাবতে গিয়ে মানুষ এখন বীতশ্রদ্ধ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে নতুনদের সামনে রেখে লড়াই ছাড়া অন্য উপায় নেই।
প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতমবাবু এখন আর সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি নিয়েছেন। স্নায়ুর সমস্যার পাশাপাশি কোমরের চোটে বিপর্যস্ত হয়ে ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে দীর্ঘ দিন। উত্তর ২৪ পরগনায় সম্প্রতি চার দেওয়ালে ঘেরা কয়েকটি সভায় গেলেও কলকাতায় অনেক দিন পরে প্রকাশ্যে দেখা গেল তাঁকে। কমিউনিস্ট ইস্তেহারের ১৭২ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘রেড বুক ডে’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক ভাষায় কমিউনিস্ট ইস্তেহারের প্রাসঙ্গকিতা ব্যাখ্যা করেছেন বাম নেতৃত্ব। এই শহরে ন্যাশনাল বুক এজেন্সির উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠানে কলেজ স্ট্রিটের মহাবোধি সোসাইটি হলে এ দিন কমিউনিস্ট ইস্তেহার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই বর্তমান রাজনীতি ও সংগঠনের প্রসঙ্গ আনেন গৌতমবাবু।
আরও পড়ুন: ‘শোভনদা’ নামছেন পুরভোটে? পদ্মের ব্যানারে রাতারাতি ছয়লাপ গোটা দক্ষিণ কলকাতা
সিএএ, এনপিআর, এনআরসি-র বিরোধিতা করেই গৌতমবাবু বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে বিজেপি কমতে শুরু করেছে, আরও কমবে। এ রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’টোকেই হারানোর জন্য পরিশ্রম করতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো অসম্ভব নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মানুষকে বলব, পশ্চিমবঙ্গকে আর শেষ করতে দেবেন না! বিজেপির উপরে ভরসা করবেন না, সিপিএমকে ফিরিয়ে আনুন। ক্ষমতায় ৩৪ বছর ছিলাম বলে বিরক্তি থেকে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। এখন তো বিজেপি আর তৃণমূল বিপর্যয় আনছে।’’
লোকসভার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরভোটে ভাল ভাবে জোট হবে এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের জেতাতে বাম কর্মীরা প্রাণ দিয়ে লড়বেন বলে দাবি করেছেন গৌতমবাবু। সেই সঙ্গেই দলের কর্মীদের প্রতি তাঁর দাওয়াই, ‘‘এলাকায় সব ল্যাম্পপোস্ট লাল পতাকায় ভরিয়ে দিন। এখন কারও উপড়ে ফেলার সাহস হবে না! বুঝিয়ে দিন, সব জায়গায় সিপিএম আছে!’’