প্রতীকী ছবি।
কয়লা পাচারের তদন্তে সিবিআই যাঁর ফ্ল্যাট সিল করেছে, সেই ব্যবসায়ী গণেশ বাগাড়িয়া বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কয়লার কারবারে কুশীলবদের ভূমিকা জানিয়ে নিজের বক্তব্য নথিভুক্ত করেছেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর। কয়লা তদন্তে অনুপ মাঝি ওরফে লালার বাড়ি-অফিসে হানা দিয়ে আয়কর দফতর এবং সিবিআই গণেশের সন্ধান পায়। সিবিআই তদন্তকারীদের দাবি, কয়লার কারবারে পুলিশ, প্রশাসন এবং প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’ করার মূল দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। তবে তিনি এখন তদন্তে সহযোগিতা করছেন। বিশেষত ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারা মেনে তাঁর বক্তব্য সিবিআইয়ের কাছে ‘তুরুপের তাস’ বলে দাবি করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।
ঘটনাচক্রে, সমস্ত অপরাধ ‘মেনে নিয়ে’ বিচারবিভাগীয় আদালতে বক্তব্য নথিভুক্ত করায় গণেশকে সিবিআই গ্রেফতার করেনি বলেই জানা গিয়েছে। লালার বাড়ি-অফিসে যখন পর পর তল্লাশি চলছিল, সে সময় দুবাই চলে গিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। ৩০ ডিসেম্বর কলকাতায় ফেরেন তিনি। ৩১ ডিসেম্বর তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্রের অফিস-বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। বিনয়ও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুবাই গিয়ে আর ফেরেননি। সিবিআই সূত্রের দাবি, এর পরেই গণেশ সিবিআইয়ের সঙ্গে দেখা করে তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করতে রাজি হয়ে যান। বক্তব্য নথিভুক্তির পর গত ৬ জানুয়ারি মুম্বই থেকে ইন্ডিগোর বিমানে দুবাই চলে গিয়েছেন গণেশ। প্রয়োজনে তিনি তদন্তে সহযোগিতা করতে আবার আসবেন বলেও জানিয়ে গিয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছে।
আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিচারবিভাগীয় আদালতে গণেশ যদি প্রভাবশালীদের নাম বলে থাকেন, ওই বক্তব্যের ভিত্তিতে সিবিআই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। আদালতেও প্রামাণ্য নথি হিসাবে ওই বক্তব্য গৃহীত হবে। তবে দেখার, গণেশ সমস্ত দোষ স্বীকার করে অপরাধী হিসাবে নিজের বক্তব্য নথিভুক্ত করিয়েছেন, না কি মামলার সাক্ষী হিসাবে নিজের কথা বলে এসেছেন। আইনজীবীদের বক্তব্য, গণেশ যদি ‘কোনও চাপ ছাড়া’ ১৬৪ ধারা অনুযায়ী বিচারবিভাগীয় আদালতে কয়লা কাণ্ডে ‘প্রভাবশালীদের’ কথা বলে আসেন এবং নিজের ভূমিকাও স্বীকার করেন, তা হলে সিবিআই কিছুটা সুবিধা পাবে। তবে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ১৬৪ ধারায় গণেশ বক্তব্য নথিভুক্ত করালেও এভিডেন্স অ্যাক্ট-এর ৭৪ ধারা অনুযায়ী, ওই বক্তব্য এখন সর্বসমক্ষে যে কেউ আনতে পারেন। আর অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরাও এভিডেন্স অ্যাক্টের ১৪৫ ধারা মেনে গণেশকে পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন। ফলে তখন গণেশ নিজের বক্তব্যো অনড় থাকেন কি না, তা দেখার।
সিবিআই অবশ্য দাবি করেছে, দু’এক জন পুলিশ অফিসারের ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ী কিছু বলতে চাননি, বরং তাঁদের তিনি বাঁচাতেই চেয়েছেন। কিন্তু ওই পুলিশ কর্তারা গরু-কয়লার টাকা হাওয়ালায় বিদেশে পাঠিয়ে সম্পত্তি কিনেছেন, এমন নথিও তাদের হাতে রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি। সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘এক সময় পুলিশ অফিসারদের একাংশকে কলকাতায় সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, এখন তাঁদেরই কেউ কেউ বন্ধুত্বের বার্তা দিতে চাইছেন। কারণ, কয়লা-গরু কাণ্ডে থানার শতাধিক ওসি’র পাশাপাশি দু’ডজনের বেশি আইপিএস অফিসারের প্রত্যক্ষ যোগ পাওয়া গিয়েছে।’’