প্রতীকী ছবি।
আপাতত বিরোধ মুলতুবি রেখে বামফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হল ফরওয়ার্ড ব্লক। তবে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে জোটের প্রশ্নে রাজনৈতিক আপত্তি বহাল রেখেছে তারা। ‘ক্রাচ’ ছেড়ে বামফ্রন্ট আবার নিজের পায়ে চলুক, এমনই দাবি তাদের।
বিধানসভা ভোটে বেনজির বিপর্যয়ের পরে ফ্রন্ট চালানোর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাম শরিক ফ ব। নির্বাচনী জোটের সিদ্ধান্ত সিপিএম নিয়ে বারবার ফ্রন্টের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে, এমনই অভিযোগ তাদের। প্রশ্নের মীমাংসা হওয়ার আগে ফ্রন্ট বৈঠকে যেতেও নারাজ ছিল তারা। সিপিএমের সঙ্গে মুখোমুখি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও গত ৭ দিনে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে ৫টি চিঠি বিনিময় হয়েছে ফ ব নেতৃত্বের। এই পর্বের শেষে দলের রাজ্য নেতৃত্বে আলোচনার পরে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় শনিবার বলেছেন, ‘‘বিমান বসু আশ্বাস দিয়েছেন, গণ-আন্দোলন থেকে নির্বাচনী সংগ্রাম, সবেতে বামফ্রন্টই মুখ্য ভূমিকা নেবে। এর পরে আগামী মঙ্গলবার ফ্রন্ট বৈঠকে না যাওয়ার কারণ নেই। আমরা ফ্রন্ট ভেঙে কিছু করার কথা বলিনি।’’
তবে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা বললেও রাজনৈতিক আপত্তি থেকে সরেননি নরেনবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারে আসার আগে, সরকারে থেকে এবং ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে— দীর্ঘ কাল বামফ্রন্ট একাই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়েছে। গত ২০১৬ সাল থেকে বামফ্রন্ট ক্রাচ নেওয়া শুরু করল! এ বার এক দিকে বাজার অর্থনীতির প্রবক্তা একটি দল (কংগ্রেস) এবং অন্য দিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির (আইএসএফ) দুই ক্রাচ দুই বগলে নিয়ে লড়াই করা মানুষ পছন্দ করেননি। তাই আমাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। মানুষ চান, ক্রাচ ছেড়ে বামফ্রন্ট নিজের পায়েই চলুক।’’ নরেনবাবু আরও উল্লেখ করেছেন, ‘‘আমরা এখানেই বিষয়টাতে দাঁড়ি টানছি না। বামফ্রন্ট আবার একই রাজনৈতিক কৌশলের দিকে এগোলে সেখানে এবং মানুষের কাছে আমাদের মত নিয়ে যাব।’’
ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু এ দিন ছিলেন ঝাড়গ্রামে। তাঁর অনুপস্থিতিতে সিপিএমের তরফে কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খোলেননি। তবে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘‘এই বিষয়ে বামফ্রন্টের বৈঠকেই আলোচনা হবে। আমাদের দলীয় পর্যালোচনাও এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আগামী ১৯-২০ জুন ফের রাজ্য কমিটির বৈঠক হবে। এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জায়গা নেই।’’ ভোটের পরে রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠকেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য জানিয়েছিলেন, আইএসএফ-কে নিয়ে দলের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও তাঁরা আগ বাড়িয়ে কারও সঙ্গে জোট ভাঙতে চান না।
ফ্রন্টের মধ্যেই অবশ্য প্রশ্ন উঠছে, সোমেন মিত্র প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের স্টিয়ারিং কমিটি গড়ার প্রস্তাব বিমানবাবুদের দিয়েছিলেন নরেনবাবুরা। ‘বাজার অর্থনীতির প্রবক্তা’ কংগ্রেসের নেতৃত্বেই কেরলে ইউডিএফের শরিক ফ ব। তা হলে এখানে কি সিপিএমের দুর্দিনে অন্য সব রাস্তা খোলা রেখে চলতে চেয়ে ফ ব এমন চাপের কৌশল নিচ্ছে?