প্রতীকী ছবি।
এ বারের বিধানসভা ভোটে এক ঝাঁক তরুণ মুখকে ময়দানে নামিয়ে নজর কেড়েছিল সিপিএম। জিততে না পারলেও প্রার্থী নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাম শিবির পায়নি। তরুণ প্রার্থীদের অনেকে অল্প হলেও ভোট বাড়িয়েছেন। কিন্তু ভোট-প্রাপ্তির নিরিখেই গণসংগঠনের শোচনীয় প্রদর্শন সঙ্কটে ফেলেছে সিপিএমকে। সংগঠনে পুনর্বিন্যাসের কথাই এখন ভাবতে হচ্ছে তাদের।
নির্বাচনী পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, রাজ্যে এ বার দলের প্রতীকে সিপিএম ১৩৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মোট ২৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়েছে। বিজেপি-বিরোধী মনোভাব থেকে মানুষ তৃণমূলকেই বেছে নিয়েছেন— সাধারণ ভাবে এ বারের ফলের বিশ্লেষণ এটাই। কিন্তু সিপিএমের জন্য বাড়তি উদ্বেগের কারণ, তাদের গণসংগঠনের সব সদস্যের সমর্থন পেলে দলের ভোট পাওয়ার পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার কথা! সাধারণ মানুষ তো পরের কথা। প্রশ্ন উঠেছে, গণসংগঠনের ভোট তা হলে গেল কোথায়?
দলের রাজ্য কমিটির সদ্যসমাপ্ত বৈঠকে পেশ হওয়া খসড়া পর্যালোচনা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ছাত্র-যুবরা এই নির্বাচনে অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।.... সাংস্কৃতিক মাধ্যমকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের সাথে সাথে ছাত্র-যুব ফ্রন্টের তরুণ কর্মীদের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। নতুন আঙ্গিকে সাংস্কৃতিক মাধ্যমকে ব্যবহার করার প্রশংসনীয় উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হল, গণফ্রন্টগুলির সদস্য সংখ্যার প্রতিফলন ভোটের ফলে লক্ষিত হল না’। গণসংগঠনগুলির মধ্যে শ্রমিক ও কৃষক ফ্রন্টের হাল বিশেষ করে চিন্তায় ফেলেছে সিপিএমকে। এলাকা এবং বুথ-ভিত্তিক পরিসংখ্যানের নিরিখে রাজ্য কমিটির রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, শ্রমিক মহল্লার বহু বুথে কোথাও দুই সংখ্যায়, কোথাও তারও কম ভোট পেয়েছেন বাম প্রার্থী! হিন্দিভাযী শ্রমিক-মজদুরদের ভোট পেয়েছে বিজেপি, সংখ্যালঘু শ্রমিকেরা বেছে নিয়েছেন তৃণমূলকে। বাম শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের কাজ এবং ‘জনবিচ্ছিন্নতা’র ছবি আতান্তরে ফেলেছে সিপিএমকে!
সার্বিক ভাবেই যে সংগঠন ঢেলে সাজা দরকার, বিপর্যয়ের পরে তা আরও মালুম হচ্ছে সিপিএমের অন্দরে। রিপোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘পার্টি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে পুনর্গঠনের বিষয়টির প্রতি এখনই বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। সংগঠন প্রশ্নে বিশদ আলোচনার মধ্য দিয়েই পুনর্গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে’। তবে আগামী আক্টোবরে শুরু হবে সিপিএমের বকেয়া সম্মেলন প্রক্রিয়া। তার পরে রয়েছে রাজ্য সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেস। তাই সংগঠনে পুনর্বিন্যাসের কাজ সম্মেলন-পর্বেই হবে বলে ঠিক করেছে সিপিএম।
আরও বেশি করে তরুণ, নতুন মুখকে সংগঠনে গুরুত্ব দেওয়াই যে এখন একমাত্র পথ, এই প্রশ্নে অবশ্য বিশেষ দ্বিমত নেই সিপিএমের নেতৃত্ব স্তরে। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি রাজ্য কমিটিতে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন, প্রমোদ দাশগুপ্তদের হাত ধরে রাজ্যে বিমান বসু, শ্যামল চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনিল বিশ্বাস, সুভাষ চক্রবর্তীরা উঠে এসেছিলেন। আবার সর্বভারতীয় স্তরে পি সুন্দরাইয়া, ইএমএসের উৎসাহে প্রকাশ কারাট, সীতারাম, বৃন্দারা সংগঠনে গুরুত্ব পেয়েছিলেন। সুতরাং, নতুনদের উপরে ভরসা রাখতেই হবে। এ বার বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার ৪৪তম বর্যপূর্তির অনুষ্ঠানেও সামাজিক মাধ্যমে সিপিএম সামনে এনেছে তরুণ নেতা-নেত্রীদেরই।