ফাইল চিত্র।
অতিমারিতে প্রায় সকলেরই কমবেশি সর্বনাশ। তবে পৌষমাসের দাক্ষিণ্যও জুটছে কারও কারও ভাগ্যে! যেমন রেল। যাত্রিবাহী ট্রেন বন্ধ তো কী? পণ্য বহন করে, বিশেষত পার্সেল ট্রেন চালিয়ে সমানে কোষাগার ভরছে রেল। তাদের এই বিশেষ সুযোগ এনে দিয়েছে ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। প্রায় রোজই জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় সড়কপথে পণ্য পরিবহণ ধুঁকছে আর শিকে ছিঁড়ছে রেলের পার্সেল ট্রেনের। নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী-সহ বহু জরুরি পণ্য বহনের মাধ্যম হয়ে উঠছে পার্সেল ট্রেন। সেই সূত্রে দেদার আয় হচ্ছে রেলের।
করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমতে শুরু করার পরে শুধু জুনে পূর্ব রেল পার্সেল ট্রেনে ২৯২৮ টন পণ্য বহন করে এক কোটি তিন লক্ষ টাকা আয় করেছে। যাতায়াতের পথে ২৩টি ট্রেন চালিয়ে ওই টাকা আয় হয়েছে। রেল সূত্রের খবর, ফল, স্কুলব্যাগ, জুতো, পান, জ্যান্ত মাছ, চারাগাছ, ডিম, বেকারিজাত পণ্য, বই, যন্ত্রাংশ, ওষুধ থেকে চিকিৎসাসামগ্রী সবই আছে ওই তালিকায়। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শিশুদের ২৭ হাজার প্যাকেট ন্যাপি পার্সেল ট্রেনে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছয়। রেলমন্ত্রী তা নিয়ে টুইটও করেন।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, কলকাতা, হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে ঘড়ি ধরে দূরপাল্লার মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের গতিতে পার্সেল ট্রেন চলছে নিয়মিত। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পার্সেল ট্রেন যাচ্ছে নয়াদিল্লি, অমৃতসর, আগরতলা, গুয়াহাটি-সহ বিভিন্ন গন্তব্যে।
অন্য দিকে, সড়ক পরিবহণের ক্ষেত্রে বড়জোর ৪০ শতাংশ ট্রাক সচল রয়েছে বলে দাবি ট্রাকমালিক সংগঠনের। চটকল-সহ বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদন বন্ধ থাকায় কাঁচামাল বহনে ট্রাকের ব্যবহার কমেছে। রাজ্যের মধ্যে অল্প দূরত্বে শাক ও আনাজ পরিবহণে যে-সব ছোট ট্রাক ব্যবহৃত হত, তার চাহিদা কমেছে। পণ্য বহনের বাড়তি খরচ দিতে পারছেন না অনেকেই।
ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, ‘‘ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পণ্য পরিবহণের খরচ অনেক বেড়েছে। লকডাউনের সময় বসে থাকায় অনেক গাড়ির কাগজপত্র এবং ফিটনেস নিয়েও সমস্যা রয়েছে। সরকার সাহায্য না-করলে এই সব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল।’’ মূলত, রেশনের চাল, গম, ত্রাণসামগ্রীর মতো কিছু জরুরি পণ্য বহন করতে হচ্ছে ট্রাকমালিকদের। নির্মাণ শিল্পের কাজকর্মে গতি না-আসায় সেখানেও বরাত জুটছে না।
রেলকর্তাদের দাবি, রেলের প্রতিটি জ়োনে পৃথক বিজ়নেস ডেভেলপমেন্ট কমিটি বিভিন্ন বাজার সমিতি, বণিকসভার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। পার্সেল বুকিংয়ের নিয়মকানুন অনেক সরল করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য ২০টির বদলে ১৫টি ভ্যান নিয়ে ওই সব ট্রেন চালানো হচ্ছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পার্সেল ট্রেনের সুবিধা ছোট ব্যবসায়ীদের খুবই কাজে আসছে। রেলের পরিষেবা দেখেই তাঁরা এর উপরে আস্থা রাখছেন।’’