CPM

CPM: ঘুরে দাঁড়াতে সুশান্তই ‘বাজি’, মানল আলিমুদ্দিন

কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্তবাবুকে জেলায় দলের শীর্ষ পদে বসানো কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের ভিতরে-বাইরে। দলেরই অন্য অংশের অবশ্য যুক্তি— প্রথমত, ওই মামলা ‘মিথ্যা’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা, মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:০৫
Share:

জেলা সম্পাদক হওয়ার পরে সম্মেলনে সুশান্ত। নিজস্ব চিত্র

বাম রাজনীতিতে চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নতুন সম্পাদক হলেন সুশান্ত ঘোষ।

Advertisement

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা সুশান্তবাবুকে রাজ্যে পালাবদলের পরে কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটতে হয়েছিল। তার পরে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে সাম্প্রতিক কালে সাসপেনশনের শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। বিতর্কের নানা অধ্যায় থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে সুশান্তবাবুকেই নেতা হিসেবে চেয়েছেন জেলা সিপিএমের বড় অংশ। দলীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার জেলা সম্মেলনের শেষ দিনে ভোটাভুটিতেও সেই মত প্রতিফলিত হয়েছে। যদিও সিপিএম নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটাভুটির কথা স্বীকার করতে চাননি। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সুনজরে না থেকেও এ ভাবে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব-প্রাপ্তি সিপিএমের রাজনীতিতে যথেষ্ট বিরল ঘটনা বলেই মনে করছে বাম শিবির।

পশ্চিম মেদিনীপুরে দীপক সরকারের পরে সুশান্তবাবুই জেলায় দলের হাল ধরবেন, এক সময়ে ধরে নেওয়া হত এমনই।‘গুরু-শিষ্যের’ রসায়নে রাঢ়বঙ্গের এই জেলায় নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে জল্পনা আছে বিস্তর। কিন্তু মামলা-মোকদ্দমা এবং আরও কিছু জটিলতায় সুশান্তবাবু জেলা রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন দলীয় সমীকরণে বিপরীত শিবিরের নেতা তরুণ রায়। আর আদালতের নির্দেশে কিছু দিন সুশান্তবাবুর জেলায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সিপিএমে বয়স-নীতির কারণে এ বার তরুণবাবুকে পদ থেকে সরে যেতে হত। তাঁর জায়গায় কে আসবেন, সেই প্রশ্নে দলে ত্রিমুখী লড়াই ছিল। সূত্রের খবর, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে জেলায় ফের সক্রিয় সুশান্তবাবুকেই সম্পাদক পদে আনতে নেপথ্যে ভূমিকা নিয়েছেন বর্ষীয়ান দীপকবাবু এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতা রবীন দেব। দলের দুই পলিটবুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও মহম্মদ সেলিমও ডেবরায় জেলা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

জেল থেকে মুক্তির পরে প্রথমে পোর্টালে কলম এবং পরে বই লিখে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ আলিমুদ্দিনের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন সুশান্তবাবু। দলীয় সূত্রের খবর, গড়বেতার প্রাক্তন বিধায়ককে জেলা সম্পাদক পদে দেখতে আগ্রহী ছিলেন না রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু। তাঁর এবং দলের একাংশের পছন্দের মুখ ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাপস সিংহ। কিন্তু সম্মেলনের অবসরে রাজ্য সম্পাদক যখন বুঝে যান বাধা পেলে সুশান্তবাবুর অনুগামীরা চ্যালেঞ্জ করবেন এবং তা রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে সুখকর হবে না, তখন তিনি আর নিজের মত ‘চাপাতে’ চাননি। একটি সূত্রের খবর, সম্মেলনে এ দিন নতুন প্যানেল পেশ হলে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দলের ‘অফিসিয়াল’ প্যানেল পায় ২১ ভোট, আর সুশান্তবাবুকে সামনে রেখে তাঁর অনুগামীদের প্যানেল পায় ৪১ ভোট। মতদানে বিরত ছিলেন তিন জন। জেলা কমিটিতে হাওয়া বুঝে ওই প্যানেলের পছন্দের সুশান্তবাবুকেই জেলা সম্পাদক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, এ বার এর আগে সিপিএমের আলিপুরদুয়ার জেলা সম্মেলনেও ভোটাভুটি হয়েছিল।

কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্তবাবুকে জেলায় দলের শীর্ষ পদে বসানো কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের ভিতরে-বাইরে। দলেরই অন্য অংশের অবশ্য যুক্তি— প্রথমত, ওই মামলা ‘মিথ্যা’। তা ছাড়া, তৃণমূল কংগ্রেসের দাপটে গুটিয়ে যাওয়া দলকে লড়াইয়ে ফেরাতে এক সময়ে তৃণমূল ও মাওবাদী মোকাবিলায় অভিজ্ঞ সুশান্তবাবুই সেরা বাজি। কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতার জেলা সম্পাদক হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘মামলা তো অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে।’’ আর নতুন দায়িত্ব পেয়ে সুশান্তবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি পার্টিটাই করি। আর তো কিছু করি না! পার্টি দায়িত্ব দিয়েছে। দায়িত্ব পালন করব একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে।’’ সম্মেলন থেকে যে ৬৫ জনের জেলা কমিটি তৈরি হয়েছে, সেখানে নতুন অন্তর্ভুক্তি ৮। বিদায়ী জেলা সম্পাদক তরুণবাবু, প্রাক্তন বিধায়ক গুরুপদ দত্ত, নাজমুল হক, সুভাষ দে-সহ কয়েক জন উল্লেখযোগ্য নেতা অব্যাহতি পেয়েছেন বয়স ও শারীরিক কারণে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement