নবান্ন। — ফাইল চিত্র
গত আর্থিক বছরের শেষ পর্যায়ে এসে লেগেছিল করোনার ধাক্কা। তাতে রোজগার একেবারে তলানিতে গিয়েছে এমন বলা যায় না। ষষ্ঠ বেতন কমিশন রূপায়ণের পরেও দেখা যাচ্ছে কর্মচারীদের মাইনে দিতে খরচ বাজেট বরাদ্দ ছাড়িয়ে যায়নি, বরং ওই খাতে হাজার তিনেক কোটি বাঁচানো গিয়েছে। তবুও বেলাগাম হল ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজস্ব ঘাটতি এবং আর্থিক ঘাটতি। দিন তিনেক আগেই গত আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব চূড়ান্ত করেছে অর্থ দফতর। নবান্নের খবর, প্রাথমিকভাবে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ শেষে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৬১ কোটি এবং আর্থিক ঘাটতি(ফিসক্যাল ডেফিসিট) পৌঁছেছে ৩৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকায়। গত ন’বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে যা সর্বোচ্চ বলে অর্থ দফতর সূত্রের খবর।
পরিকল্পনা বহির্ভূত খরচে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শেষ পর্যন্ত উন্নয়নে কোপ পড়েছে। পুরনো সরকারি পরিকাঠামো বা সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি কোনও একটি অর্থবর্ষে মূলধনী ব্যয়ের মাধ্যমে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৯-২০অর্থ বর্ষে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ৩০ হাজার ৭৩১ কোটি টাকার মূলধনী ব্যয়ের ঘোষণা করেছিলেন। বাস্তবে বছর শেষে দেখা যাচ্ছে এই খাতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১৬ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। বাস্তবে নতুন উন্নয়ন প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের অর্ধেকও খরচ করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। যদিও মূলধনী ব্যয় বাম জমানার চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে বলে দাবি করা হয়। চলতি আর্থিক বছরে ইতিমধ্যেই রাজ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলির বরাদ্দের তিন ভাগ ইতিমধ্যেই ছাঁটাই করে দিয়েছে অর্থ দফতর। ফলে ভোটের বছরে উন্নয়নের কাজে হাত দেওয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অর্থ কর্তারা জানাচ্ছেন।
কেন রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি ও আর্থিক ঘাটতি এত বেড়ে গেল?
নবান্নের অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের নিজস্ব জিএসটি সংগ্রহ, জমির খাজনা, স্ট্যাম্প ডিউটি-রেজিস্ট্রেশন কোনও খাতেই বাজেটে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি। কেবলমাত্র মদের থেকে পাওয়ার আবগারি শুল্ক এবং পেট্রল ডিজেলের বর্ধিত দামের উপর যে বিক্রয় কর সংগ্রহ হয় তা থেকে আশানুরূপ আয় হয়েছে। তারপরেও পরিস্থিতি সামলে দেওয়া যেত যদি কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য টাকার পুরোটা পাওয়া যেত। অর্থ কর্তারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্র থেকে কর বাবদ ৬২ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি আর পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সেই কারণেই ২০১৮-১৯ এর তুলনায় ২০১৯-২০ তে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। চলতি করোনা পরিস্থতির কারণে চলতি আর্থিক বছরে রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা কর্তাদের।
আয় বাড়ছে না বুঝেও সরকার ব্যয় কমাতে উদ্যোগ নেয়নি কেন?
কর্তারা জানাচ্ছেন, ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার বেতন-পেনশন খাতে গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। যদিও বাজেটে যে টাকা ধরা হয়েছে তার চেয়ে খৱচ অনেকটাই কম হয়েছে। এ ছাড়া ঋণের সুদ-আসল শোধের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। কর্তাদের দাবি,বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নেওয়া ১০ বছরের মেয়াদি ঋণের সুদ এবং আসল ২০১৯-২০ সাল থেকে শোধ করতে হচ্ছে। এর পর মেলা, খেলা, পেনশন, ভাতাসহ যে বিপুল খরচ রয়েছে তা বহন করতে হয়েছে। চুক্তিতে কাজ করা কর্মচারীদের বেতন দিতেও সরকারকে মোটা টাকা গুণতে হচ্ছে।