গাঁধীজিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র
এই প্রথম বার রাজ্য বিজেপি দফতরে মহাত্মা গাঁধীর মৃত্যুদিন পালিত হল। শুধু তাই নয়, নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হওয়ার দিনটিকে ‘বলিদান দিবস’ বলে উল্লেখ করলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সাধারণ ভাবে যদিও দলের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যদিনকেই ‘বলিদান দিবস’ বলে থাকে বিজেপি। সুকান্ত বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার গাঁধীজির নির্দেশিত পথে এগোচ্ছে। গাঁধীজির স্বপ্ন সফল করতেই নরেন্দ্র মোদী গ্রামোন্নয়ন থেকে স্বচ্ছ ভারতের মতো প্রকল্প নিয়েছেন বলেও দাবি করেন সুকান্ত। কিন্তু আচমকা গাঁধীজির মৃত্যুদিন পালনের আয়োজন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। তাঁর দাবি, এটা বিজেপি-র পরম্পরা নয়।
১৯৪৮ সালে গডসের গুলিতে মৃত্যু হয় গাঁধীজির। গডসে গেরুয়া শিবিরের সদস্য ছিলেন অভিযোগে সেই সময়ে দেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর কার্যকলাপ কিছু দিনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। পরে কেন্দ্র অভিযোগ তুলে নিলেও এখনও সঙ্ঘ পরিবার গডসে ঘনিষ্ঠতা বিতর্ক থেকে মুক্তি পায়নি। পরে সঙ্ঘেরই আদর্শে তৈরি রাজনৈতিক দল বিজেপি-র বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। তবে গাঁধীজির প্রতি গেরুয়া শিবিরের মনোভাবের একটা পরিবর্তন দেখা যায় নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে। দেশ জুড়ে ঘটা করে ২ অক্টোবর গাঁধীজির জন্মজয়ন্তি পালনের কর্মসূচি নেয় বিজেপিও। গত কয়েক বছর ধরে ওই দিনে বিজেপি নেতা, কর্মীরা খাদির বস্ত্র কেনার কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য দফতরে আগে কখনও গাঁধীজির মৃত্যুদিন পালন করেছে কি না তা গেরুয়া শিবিরের কেউ মনে করতে পারছেন না।
এই প্রসঙ্গে তথাগত আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘বর্তমান বিজেপি কী করে, আর কী করে না তা বোঝা মুশকিল। তবে আমার আমলে এ সব হয়নি। এটা দলের পরম্পরা ভঙ্গ বলেই আমি মনে করি।’’ তথাগত এমন প্রশ্ন তুললেও বিষয়টা প্রথাভঙ্গ বলে মানতে নারাজ রাজ্য বিজেপি-র আর এক প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিংহ। অন্যান্য রাজ্য নেতাদের সঙ্গে রবিবার তিনিও রাজ্য দফতরের কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন। রাহুল বলেন, ‘‘গাঁধীজির জন্মজয়ন্তি পালন করলে মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা জানাতে সমস্যা কোথায়। বিজেপি-ই একমাত্র দল যাঁরা গাঁধীজির দেখানো পথের একমাত্র অনুগামী। অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন দলের সভাপতি ছিলেন তখন বিজেপি-র আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গী ছিল ‘গাঁধীবাদী সমাজবাদ’। পরে সময়ে বদলে সেই সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হয়েছে। কিন্তু গাঁধীজির প্রতি বিজেপি-র শ্রদ্ধা কোনও দিন কম ছিল না, এখনও নেই।’’