কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন। —ফাইল ছবি।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগের জন্য কি শিল্পমহলকে বিশেষ উৎসাহ ভাতা দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র?
উত্তর: না। আমার মনে হয় না, তেমন কিছু ভাবা হবে।
প্রশ্ন: তা হলে বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশকে নিয়ে পূর্বাঞ্চলের সর্বাত্মক উন্নয়নের যে ‘পূর্বোদয়’ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন, তা কী ভাবে রূপায়িত হবে?
উত্তর: এই ‘পূর্বোদয়’ প্রকল্প প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকার স্পষ্ট করছে। তা হল পূর্ব ভারতে দ্রুত গতিতে উন্নয়ন দরকার। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারত ইতিমধ্যেই উন্নতি করেছে। উত্তর ভারতে হরিয়ানা, পঞ্জাব, হিমাচলের মতো রাজ্যে মাথাপিছু আয় দেশের গড় মাথাপিছু আয়ের থেকে বেশি। বিকশিত ভারত-এর লক্ষ্য পূরণ করতে পূর্বাঞ্চলে নজর দিতে হবে, যেখানে তুলনামূলক ভাবে কম উন্নতি হয়েছে। এটাই ‘পূর্বোদয়’ প্রকল্পের ভাবনা। এর মধ্যে রয়েছে পরিকাঠামো তৈরি, শিল্পায়নে উৎসাহ দেওয়া, রাজ্য সরকারের শিল্প সম্পর্কিত বিধিনিয়ম আরও ভাল করা, রাজ্য স্তরে বিভিন্ন রকম আর্থিক সংস্কার এবং অবশ্যই কেন্দ্রের তরফ থেকে পূর্বাঞ্চলে অর্থলগ্নি।
প্রশ্ন: কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার সঙ্গে বৈষম্য করছে। একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখে রাজ্যকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। বিজেপিকে ভোট না দিলে টাকা মিলবে না বলে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কী বলবেন?
উত্তর: আমি তো সরকারি আমলা। রাজনৈতিক অভিযোগের জবাব দিতে পারব না। তবে অর্থ মন্ত্রকের সচিব হিসেবে বলতে পারি, অর্থ মন্ত্রকের তরফে কারও সঙ্গে বৈষম্য হয়নি। অর্থ কমিশনের অনুদান হোক বা কেন্দ্রীয় করের ভাগ— নির্দিষ্ট সূত্র মেনে টাকা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যায়। পরিকাঠামোয় খরচের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে বিশেষ অর্থসাহায্য করা হচ্ছে। সেই টাকাও সবাই পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গও। যে সব বিশেষ প্রকল্পের কথা বলছেন, তার সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন: পরিকাঠামোয় খরচের জন্য কেন্দ্র দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে অর্থসাহায্য করছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে শর্ত বেঁধে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী দাবি জানিয়েছেন, শর্তহীন টাকা দেওয়া হোক। কেন শর্ত বেঁধে দেওয়া হচ্ছে?
উত্তর: শর্তগুলো শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়। সকলের জন্যই। তার লক্ষ্য হল, অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য রাজ্যগুলিকে কিছু সংস্কারে উৎসাহ দেওয়া। যেমন পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সরকার মনে করে, বেশ কিছু সংস্কার দরকার। আর্থিক সাহায্যের অনেকখানিই শর্তহীন। কিছু ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত মেনে সংস্কার করে পশ্চিমবঙ্গ টাকাও পেয়েছে।
প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামোয় বিপুল অর্থ খরচ করছে। কিন্তু পরিকাঠামোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিহারে নিয়মিত সেতু ভেঙে পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো অনেক রাজ্যে জাতীয় সড়কে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
উত্তর: এই পরিকাঠামোর গুণগত মান নিয়ে বলতে পারব না। আমরা পরিকাঠামোয় বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ধরে রেখেছি।
প্রশ্ন: বাজেট নিয়ে অভিযোগ, সমগ্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পিএম-পোষণ, আয়ুষ্মান ভারতের মতো শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে খরচের হার হয় একই রয়েছে বা কমেছে। এর কারণ কী?
উত্তর: বাজেটের মোট খরচের মধ্যে এই সব খাতে খরচের ভাগ কমেছে, এটা সত্যি। তবে তার মানে এমন নয় যে, এ সব ক্ষেত্রে খরচ কমেছে। আসলে পরিকাঠামো খাতে খরচে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সেখানে খরচের ভাগ বেড়েছে।
প্রশ্ন: মিড-ডে মিল নিয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ, পড়ুয়াদের মাথা পিছু যে ৫.৪৫ টাকা থেকে ৮.১৭ টাকা বরাদ্দ, সে টাকায় কিছুই হয় না। সরকার কেন এটা নিয়ে ভাবছে না?
উত্তর: সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক থেকে এই খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি। যদি আসে, তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। (চলবে)