Sagardighi By Election

একুশের পর ২২ মাসে প্রথম হার শাসকদল তৃণমূলের, সাগরদিঘির বাতাসে লাল-সবুজ আবিরে আগাম দোল

প্রথম বার উপনির্বাচনে ধাক্কা খেলেন তৃণমূল নেতৃত্ব, তা-ও আবার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত একটি আসনে। যে সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ পেয়েই নীলবাড়ির লড়াইয়ে জয়ের পথ মসৃণ হয়েছিল তৃণমূলের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৫
Share:

শাসক তৃণমূলকে হারিয়ে জয় পেয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। প্রতীকী ছবি।

শুধু জয় আর জয়। ২০২১ সালে বিপুল জয়ের পর গত দেড় বছরের কিছু বেশি সময় ধরে এটাই দেখে এসেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। প্রতিটি উপনির্বাচনেই সবুজ আবির উড়েছে। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতেও উড়ল সবুজ আবির। তবে তার সঙ্গে মিশে গেল লাল আবিরও। কারণ, শাসক তৃণমূলকে হারিয়ে জয় পেয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট।

Advertisement

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিরাট জয় দিয়ে নবান্নের মসনদে প্রত্যাবর্তন হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তারপর থেকে ছোট-বড় সব নির্বাচনেই দৌড়েছিল তৃণমূলের অশ্বমেধের ঘোড়া। কিন্ত বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের গণনাপর্বের প্রথম রাউন্ড থেকেই উধাও সেই দাপট। একটির পর একটি রাউন্ডের গণনা যত এগিয়েছে, ততই তলিয়ে গিয়েছে শাসকদলের জয়ের সম্ভাবনা। সাগরদিঘিতে এসেই যেন ডুবল উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের বিজয়রথ।

আরও একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। ২০২১ সালের পর তৃণমূল এই প্রথম এমন একটি আসনের উপনির্বাচনে ধাক্কা খেল, যা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। যে সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ পেয়েই নীলবাড়ির লড়াইয়ে জয়ের পথ মসৃণ করেছিল তৃণমূল। সাগরদিঘিতে সেই ভোট অন্য দিকে চলে যাওয়াতেই এমন ফল বলে মনে করছেন অনেকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এই ফলাফল থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, সব সংখ্যালঘু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে নেই।’’ যার জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘সংখ্যালঘুরা আমার পাশে আছেন। আমিও তাঁদের পাশে আছি। একটা আসনে জিতে এ সব মন্তব্য করা যায় না। তবে আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’

Advertisement

২০২১ সালের পর থেকে এ যাবৎ যতগুলি উপনির্বাচন হয়েছে, প্রতিটিতে জিতেছে তৃণমূল। ২০২১ সালের ২ মে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছিল, ২১৩টি আসনে জয়ী তৃণমূল, ৭৭টি আসনে বিজেপি এবং একটি মাত্র আসনে জয়ী হয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী। ভবানীপুর থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন তৃণমূলের শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ২১ মে তিনি নিজের আসন থেকে পদত্যাগ করেন। ওই আসনে ভোট হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। ভবানীপুরের উপনির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে লড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি ৫৬ হাজার ভোটে জেতেন।

৩০ অক্টোবর উপনির্বাচন হয় আরও চার আসনে। বিজেপির ৭৭টি আসনের মধ্যে জয়ী হয়েছিলেন দুই সাংসদ। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার জিতেছিলেন শান্তিপুর থেকে। কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক জিতেছিলেন দিনহাটা থেকে। তাঁরা ইস্তফা দেন। ভোটগণনার আগেই প্রয়াত হন খড়দহের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ। জয়ের কয়েক দিন পরেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর।

তাই দিনহাটা এবং শান্তিপুরের সঙ্গে উপনির্বাচন হয়েছিল গোসাবা ও খড়দহেও। চার আসনের উপনির্বাচন হয় ৩০ অক্টোবর। ২ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণা হলে দেখা যায়, সব আসনেই এক লাখের বেশি ব্যবধানে জিতেছে শাসক তৃণমূল। ওই বছরের ৪ নভেম্বর মারা যান রাজ্যের মন্ত্রী তথা বালিগঞ্জের বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর শূন্য আসনে ভোট হয় গত বছর এপ্রিল মাসে। বিজেপির আসানসোলের সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সু্প্রিয় আগেই তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন। তাঁকেই বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিল। ব্যবধান অনেকটা কমে গেলেও জিতেছিলেন বাবুল। আবার বাবুলের ছেড়ে আসা আসানসোল লোকসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে রেকর্ড ভোটে জেতেন অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিংহ। বিজেপির থেকে আসানসোল আসনটি জিতে নেয় তৃণমূল। বস্তুত গত দেড় বছরের কিছু বেশি সময়ে রাজ্যে বিভিন্ন পুরভোটেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিল তৃণমূল। হার হয়েছে শুধু নদিয়ার তাহেরপুরে।

সাগরদিঘির হারকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলেই মনে করছে শাসক শিবির। এই হার কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলবে তাদের। ইতিহাস বলছে, ২০১১ সালের কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে উপেক্ষা করে তৎকালীন মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূলের জন্য বরাদ্দ সাগরদিঘি, ভগবানগোলা, হরিহরপাড়া-সহ চার আসনেই নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন। গোটা রাজ্যে বড় জয়ের মধ্যেও তিনটি আসনেই হেরেছিল তৃণমূল। একমাত্র সাগরদিঘিতে প্রথম বার ফুটেছিল জোড়াফুল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে যে চারটি আসনে একক লড়াইয়ে তৃণমূল জয় পেয়েছিল, তার মধ্যেও সাগরদিঘি ছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও সাগরদিঘিতে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। এ বার তারা হেরেছে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে। মাত্র পৌনে দু’বছরের ব্যবধানে সাগরদিঘির উপনির্বাচনে ফলাফল তাই তৃণমূল নেতৃত্বকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। যেমন দলের সর্বময় নেত্রী স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘এই হার থেকে তৃণমূল শিক্ষা নেবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement