সরকারি বাসের বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র
সরকারি বাসের বেশির ভাগেরই বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পরিবহণ দফতরের একটি সূত্রের দাবি, প্রায় বছর খানেক সময় ধরে পর্যায়ক্রমে সরকারি বাসগুলির বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই নতুন করে সরকারি বাসগুলিকে বিমার আওতায় আনতে প্রয়োজন প্রায় পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা। কিন্তু টাকার অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে কোনও বিমা ছাড়াই চলছে সরকারি বাস। কমবেশি প্রায় সাড়ে তিন হাজার সরকারি বাস এ ভবেই চলছে। স্বভাবতই বাসগুলি দুর্ঘটনায় পড়লেও বিমার অর্থ দাবি করতে পারছে না। যার জেরে চালক কিংবা কনডাক্টরদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করছেন পরিবহণ কর্তারা।
এমতাবস্থায় এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে চান পরিবহণ মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার সঙ্গে পরিবহণ সচিবের কথা হয়েছে। আমি পরিবহণ সচিবকে লিখিত ভাবে নির্দেশ দিয়েছি, যদি কোনও বাসের বিমা ও ফিট সার্টিফিকেট না থাকে, তা হলে সেই বাসকে রাস্তা নামানো যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি, দু’রকমের বাসের ক্ষেত্রেই আমাদের এই নির্দেশ কার্যকর হবে।’’
কড়া পদক্ষেপের পাশাপাশি এই সমস্যার সমাধানে বিকল্প ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি এ বিষয়ে পরিবহণ দফতরের শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরিবহণ নিগমগুলিকে আর পৃথক পৃথক ভাবে বিমা করাতে হবে না। রাজ্যজুড়ে সরকারি বাসের জন্য অভিন্ন বিমাকরণ পদ্ধতি শীঘ্রই চালু হবে। অর্থ দফতরের প্রস্তাব, এই লক্ষ্যে কয়েক কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করা হোক। তা থেকেই কেন্দ্রীয় ভাবে বিমার কিস্তির টাকা মেটাবে সরকার। এই লক্ষ্যে একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক কথাও হয়েছে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের।
পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা খুব শীঘ্রই সরকারি বাসগুলির বিমা করিয়ে নেব। এ নিয়ে সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ তবে বিমার ক্ষেত্রে সরকারি বাস কেন নিয়ম ভাঙছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলি। আর এমন প্রশ্নের জবাব দিতেই মন্ত্রী ফিরহাদ কড়া অবস্থানের কথা বলেছেন। কারণ, গাড়ির বিমা পথ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি বাসের বিমা না থাকলে পুলিস মামলা করে বলে মালিকদের অভিযোগ। পাশাপাশি বিমার মেয়াদ ফুরনো বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়লে মালিকের জেল নিশ্চিত। সার্বাবান বাস সার্ভিসেসের পক্ষে টিটো সাহা বলেন, ‘‘সরকারি বাস বিমা না থাকলেও রাস্তায় নামতে পারে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেই ছাড়ের অবকাশ নেই। পাঁচ হাজার টাকা পেনাল্টি করা হয়। আর বিমা ফেল থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ আমাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন না। ’’
প্রসঙ্গত, কলকাতা-সহ শহরতলি এলাকায় সরকারি বাস পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (ডব্লুবিটিসি)। যার অধীনে প্রায় ১৫০০টি এসি-ননএসি বাস রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের এসি ভলভো বাসও। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমের রয়েছে আরও ১৭০০টি বাস। আপাতত দ্রুত সমস্যার সমাধান করে রাস্তায় বেশি সংখ্যায় সরকারি বাস চালাতে চায় পরিবহণ দফতর।