প্রতীকী ছবি।
করোনার দাপটে উচ্চ মাধ্যমিকের কিছু পরীক্ষা অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। এখনও পরিস্থিতি যা, তাতে জুলাইয়ে না-নিয়ে আরও এক মাস পরে সেই সব পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে বলে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে পাঠ্যক্রম কমিটি। একই সঙ্গে তাদের পরামর্শ, এই অবস্থায় রাজ্যে খুব তাড়াতাড়ি স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত না-নেওয়াই ভাল।
মারণ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এমনই চেহারা নিয়েছে যে, আইসিএসই বোর্ড দশম ও দ্বাদশের বাকি পরীক্ষা ঐচ্ছিক করে দিয়েছে। বঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে নেওয়ার কথা। কিন্তু করোনার এই প্রবল প্রতাপের দুঃসময়ে সেই সব পরীক্ষা আদৌ নেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে জোরদার বিতর্ক চলছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংক্রমণ থেকে পরীক্ষার্থীদের বাঁচাতে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে। কিন্তু রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটি সুপারিশ করেছে, প্রয়োজনে বাকি পরীক্ষা এখনই না-নিয়ে আরও কিছু পরে নেওয়া যেতে পারে। স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য বোর্ড কী করছে, সেটাও ভাল ভাবে দেখা দরকার। আইসিএসই বোর্ড তো বলেই দিয়েছে, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ছেলেমেয়েরা চাইলে দিতে পারে, না-ও দিতে পারে।
শিক্ষক সংগঠন, অভিভাবকদের বক্তব্য, পরীক্ষা আদৌ হবে কি না, হলে কী ভাবে হবে, এই নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দূরত্ব-বিধি মেনে পরীক্ষার্থীদের বসাতে গেলে আরও বেশি পরীক্ষা কেন্দ্র লাগবে। কোথায় কত বাড়তি কেন্দ্র হচ্ছে, সেই বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশিকাই আসেনি বলে জানান ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস'-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস।
ফের স্কুল খোলার সিদ্ধান্তও খুব ভেবেচিন্তে নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছে পাঠ্যক্রম কমিটি। স্কুল কবে খোলা যায় এবং পাঠ্যক্রম কতটা শেষ করা যাবে, তা কতটা সঙ্কুচিত করা যায়— স্কুলশিক্ষা দফতর এই সব বিষয়ে পাঠ্যক্রম কমিটির মতামত চেয়েছিল। কমিটি এই বিষয়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, পবিত্র সরকার, জয় গোস্বামী, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীদের মতো লেখক-কবি-চিন্তাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তার পরেই কমিটি সম্প্রতি সুপারিশ জমা দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরে। কমিটির সুপারিশ, উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষার ক্ষেত্রে খুব তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না।
এর পাশাপাশি পাঠ্যক্রম কমিটির অভিমত, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার আগে স্কুল খোলার পথে না-এগোনোই ভাল। যখন স্কুল খোলা হবে, পড়ুয়াদের সুরক্ষিত রাখার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেরিতে স্কুল খুললে পাঠ্যক্রম যদি শেষ করা না-যায়, পরবর্তী ক্লাসে প্রথমেই অসমাপ্ত অংশটি পড়িয়ে নেওয়া দরকার। করোনা পরিস্থিতির পরে কেউ যদি ফল খারাপ করে, তার জন্য চাই ‘রিমেডিয়াল ক্লাস’। যদি স্কুল খোলার পরিস্থিতি তৈরি হতে আরও বেশ কয়েক মাস দেরি হয়, তা হলে ডিসেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শেষ না-করে সেটাকে আরও কিছু মাস টেনে নিয়ে যাওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছে পাঠ্যক্রম কমিটি।
প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এ রাজ্যে ১০ জুন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাবে। পরে ঠিক হয়, ৩০ জুন পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। এরই মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক জানিয়ে দেন, দেশের সর্বত্র ১৫ অগস্টের পরে স্কুল-কলেজ খুলবে। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুলাইয়েও স্কুল খোলা যাবে কি না, সেই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। শিক্ষা সূত্রের খবর, পাঠ্যক্রম কমিটি যে-সব বিশিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁরাও সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে শূন্য হওয়ার পরেই স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন।