(বাঁ দিকে) বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র। অর্ণব দাম (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
প্রবেশিকা এবং পরে ইন্টারভিউতে প্রথম হয়েও জেলবন্দি প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের গবেষণার বিষয়টি আটকে রয়েছে। আঙুল উঠেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দিকে। উপাচার্য গৌতম চন্দ্র যদিও সেই দায় ঠেলেছেন হুগলি জেল কর্তৃপক্ষের দিকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে জানিয়েছিলেন, হুগলি জেলের সুপারকে দু’টি প্রশ্ন করে চিঠি দিলেও সে চিঠির জবাব পাননি। এর পর হুগলি জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগায়োগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সেই চিঠি রাজ্যের কারা দফতরকে পাঠানো হয়েছে। তার জবাব এখনও আসেনি। এই আবহে হুগলি জেলে প্রতীকী অনশনে বসেছেন অর্ণব।
তৃণমূলের অভিযোগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ‘অনাবশ্যক’ জটিলতা তৈরি করছেন বলেই গবেষণা করতে পারছেন না অর্ণব। গৌতম যদিও জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই সংক্রান্ত দু’টি প্রশ্ন করে চিঠি দিয়েছিলেন জেল সুপারকে। তার জবাব এখনও পাননি। কী সেই প্রশ্ন? তাঁর কথায়, “আমি হুগলির জেল সুপারকে চিঠি দিয়ে দু’টি প্রশ্ন করেছিলাম। প্রথম প্রশ্ন, কী ভাবে অর্ণব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত ক্লাস করবেন? সে ক্ষেত্রে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি কে বা কারা দেখবেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন, অর্ণবকে পিএইচডি করতে দেওয়ার বিষয়ে জেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন রয়েছে কি না।” উপাচার্য জানান, ওই দু’টি বিষয়ের ‘সদুত্তর’ না মেলায় অর্ণবের পিএইচডিতে ভর্তির বিষয়টি শুরু করা যাচ্ছে না। এ বার জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই প্রশ্ন রাজ্যের কারা দফতরকে পাঠানো হয়েছে।
খড়্গপুর আইআইটির মেধাবী ছাত্র অর্ণব পড়াশোনা ছেড়ে সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। গত ফেব্রুয়ারিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান তিনি। দীর্ঘ দিন ধরেই হুগলি জেলা সংশোধনাগারে বন্দি। তিনি জেলে বসেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা সেট-এ উত্তীর্ণ হন। তার পরে জেল থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে গিয়ে পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তার পরেও গবেষণার কাজ শুরু করতে পারেননি তিনি। সেই নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপড়েন।
এর পরেই হুগলি জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পাঠানো চিঠি রাজ্যের কারা দফতরকে পাঠানো হয়েছে। তার জবাব এখনও আসেনি। জবাব এলে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে উপাচার্যকে। অর্ণব যদিও গোটা বিষয়টির প্রতিবাদে হুগলি জেলে প্রতীকী অনশনে বসেছেন।