সুচেতনা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
তাঁর আত্মপ্রকাশের খবর সামনে এসেছে কিছু দিন আগেই। রূপান্তরকামী পুরুষ সুচেতন ভট্টাচার্য মঙ্গলবার বিকেলে বলছিলেন, ‘‘যা রায় তা একেবারে হতাশার, বা এখনই উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো বলে ঠিক মনে হচ্ছে না। একটা রুপোলি রেখা অবশ্যই আছে।’’ সুচেতনের জীবনসঙ্গিনী তথা লিভ-ইন পার্টনার সুচন্দা মুখোপাধ্যায়ও সকাল থেকে রায়টির অপেক্ষায় ছিলেন। অফিসে কাজের ফাঁকে খবরটা পেয়ে তাঁরও উপলব্ধি, ‘‘এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে!’’
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের এক মাত্র সন্তান সুচেতন বলছিলেন, ‘‘এমন নয় যে আমি আর সুচন্দা বিয়ে করতে চাইছি, কিন্তু বিয়ে করা বা আর পাঁচ জনের মতো অধিকারটা আমাদের মতো সবারই থাকা উচিত!’’
সমলিঙ্গে বিবাহে সায় দিতে অপারগ সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু রূপান্তরকামী কোনও ব্যক্তির বিয়ের ক্ষেত্রে এ দেশের আইন অনুযায়ী বাধা নেই বলেই সর্বোচ্চ আদালতের মত। রূপান্তরকামী এক জন পুরুষ কোনও মহিলাকে বা রূপান্তরকামী নারী কোনও পুরুষকে বিয়ে করলে তা বিষমকামী বিবাহ হিসেবেই দেখার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে বাস্তবে এই ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা দেখছেন অনেক রূপান্তরকামী জুটি।
সুপ্রিম কোর্টের আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন এ শহরের রূপান্তরকামী নারী, সিপিএমের গণতান্ত্রিক এলজিবিটিকিউআই মঞ্চের আহ্বায়ক অপ্রতিম রায় (সুপ্রভা)। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র এখনও জন্মগত পুরুষ এবং মহিলার বিয়েই মানে। তাই আমাদের লড়াইটা শেষ হল ভাবছি না।’’ তিনি বলছিলেন, ‘‘আকছার কোনও রূপান্তরকামী মেয়ে বা পুরুষ এবং তাঁদের সঙ্গীদের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। পুলিশ আমল দেয় না। সুপ্রিম কোর্ট এই ধরনের অত্যাচার বন্ধ করতে বললেও সেটা বাস্তবে শোনা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।’’
রূপান্তরকামী পুরুষ, আইনজীবী অঙ্কন বিশ্বাস সুপ্রিম কোর্টের কিছু পর্যবেক্ষণে খুশি হলেও রূপান্তরকামীদের বিয়ের রূপায়ণে নিশ্চিত হতে পারছেন না।
কয়েক বছর আগে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন রূপান্তরিত নারী তিস্তা দাস এবং রূপান্তরিত পুরুষ দীপন চক্রবর্তী। তাঁরা দু’জনেই লিঙ্গান্তরের অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ করেছিলেন। এ দেশের আইন কিন্তু বলে লিঙ্গ পরিচয় স্বনির্ধারণের জন্য অস্ত্রোপচারের দরকার নেই। লিঙ্গ পরিচয় বিষয়টি শরীরগত নয়, মানসিক। তবে এ প্রসঙ্গে তিস্তা বলছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট রূপান্তরকামীদের বিয়ে আইন বিরোধী না-বললেও এমন বিয়ে সোজা নয়। জেনেশুনে বিয়ের পরে রূপান্তরকামী কোনও নারীকে ‘পুরুষ’ বলে হেনস্থার ঘটনা আজও ঘটে।’’
দেশের ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইনেও বিয়ের বিষয়টি লেখা নেই বলে অনেকের আশঙ্কা রয়েছে। তবে মাদ্রাজ হাই কোর্ট ২০১৯-এর একটি মামলায় রূপান্তরকামী একটি মেয়ের বিয়েকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সমাজকর্মী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় কিন্তু আশাবাদী, সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যে রূপান্তরকামীদের হাত শক্ত হল।
বাপ্পা এবং তাঁর জীবনসঙ্গিনী, রূপান্তরকামী নারী অনুপ্রভার দাবি, ‘সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমরা বিয়ের রেজিস্ট্রি করার নোটিস দেব।’ রূপান্তরকামীদের লড়াইয়ের জায়গা তৈরি হলে, সমপ্রেমী জুটির ক্ষেত্রেও আশা থাকবে বলে মনে করছেন
কেউ কেউ।