সিরাজুল মণ্ডল এবং তাঁর বৃদ্ধা মা। নিজস্ব চিত্র।
ছেলে এখনও বেঁচে। তবে এককালের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বাঁচাতে’ গিয়ে কাজ হারিয়ে তিনি ‘জীবন্ত শহিদ’। ১৯৯৩ সালে একুশের সেই ‘জীবন্ত শহিদে’র বৃদ্ধা মায়ের আজও আশা, সে দিনের সেই বিরোধী নেত্রী তথা অধুনা মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাত ধরেই পুলিশের চাকরি ফিরে পাবে তাঁর ছেলে সিরাজুল।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটার বাসিন্দা সিরাজুল মণ্ডলের দাবি, বাম আমলে ’৯৩-এর ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচাতে গিয়েই পুলিশের চাকরি খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে। সে দিন সচিত্র পরিচয়পত্রের জন্য মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। মিছিল নিয়ে মহাকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সে সময় কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার দীনেশ বাজপেয়ীর নির্দেশে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। তখন ২৭ বছরের সিরাজুল কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত। মমতার ওই অভিযানের সময় অন্যান্য পুলিশকর্মীদের সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। সিরাজুলের দাবি, মমতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার নির্মল বিশ্বাসের নির্দেশে তাঁর ঊর্ধ্বতন আধিকারিক দীনেশ বাজপেয়ীর দিকে নিজের সার্ভিস বন্দুক তাক করেছিলেন। চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘‘স্যার এই অত্যাচার থামান। না-হলে আপনাকে গুলি চালাতে বাধ্য হব আমি।’’ সিরাজুলের আরও দাবি, তাঁর সেই রণং দেহি মূর্তি দেখেই রণে ভঙ্গ দিয়েছিলেন পুলিশকর্তা। ঘটনাটি ঘটে ব্রেবোন রোডে।
সিরাজুলের দাবি, ওই ঘটনার জেরেই তাঁর উপর মানসিক অত্যাচার চলেছে। তিন বছর বাদে তাঁকে চাকরি থেকেও বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এর পর আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য দরবারও করেন। কিন্তু, তাতে সুরাহা হয়নি। অবশেষে টাকার অভাবে আদালতের দরজায় ঘোরাও বন্ধ হয়ে যায়।
ছেলেকে নিয়ে ভাঙাচোরা দরমার বেড়া দেওয়া একটি টিনের চালাঘরে বাস করেন সিরাজুলের বৃদ্ধা মা। ভাই-বোন, ছোট ভাগ্নে, ভাগ্নী-সহ বৃদ্ধা মায়ের সংসার টানতে আজকাল দিনমজুরের কাজ করেন সিরাজুল। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে আলিপুর বডিগার্ড লাইনে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দিয়েছিলেন। সে চাকরির মেয়াদ এখনও বছর চারেক বাকি। তাঁর মায়ের আশা, মমতার সৌজন্যেই কনস্টেবলের সেই চাকরি ফিরে পাবে সিরাজুল!