Enforcement Dorectorate

Abhishek Banerjee: তদন্তে নাক গলাবে না আদালত, অভিষেক-ইডি যুদ্ধে ব্রিটিশ আমলের লাহৌর মামলার ছায়া

সোম ও মঙ্গলবার দিল্লিতে ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের মুখোমুখি হতে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২ ০৭:১৩
Share:

ফাইল চিত্র।

ব্রিটিশ জমানায় লাহৌর হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এবং খ্বাজা নাজির আহমেদ।

Advertisement

১৯৪৪ সালের পরাধীন ভারতের লাহৌর ও ২০২২-এর কলকাতা। এক সূত্রে বেঁধে দিল বেআইনি কয়লা পাচার কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্ত।

সোম ও মঙ্গলবার দিল্লিতে ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের মুখোমুখি হতে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে ইডি-র নয় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছিলেন অভিষেক। তার পরেই তিনি ও রুজিরা দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। হাই কোর্ট অভিষেক ও তাঁর স্ত্রীর আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। তার পরেই ফের অভিষেকদের সমন পাঠিয়েছে ইডি।

Advertisement

দিল্লি হাই কোর্টের এই মামলাতেই উঠে এসেছে ব্রিটিশ জমানার ৭৮ বছর আগের লাহৌরের একটি বিখ্যাত মামলার প্রসঙ্গ। যার নাম কিং-এমপারার অর্থাৎ ব্রিটিশ সম্রাট বনাম খ্বাজা নাজির আহমেদ মামলা। যার ফয়সালা করেছিল প্রিভি কাউন্সিল। সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার আগে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলা জমা পড়ত ব্রিটিশদের তৈরি এই প্রিভি কাউন্সিলে। সেই মামলায় প্রিভি কাউন্সিলের মত ছিল, আদালত কোনও তদন্তে বাধা দেবে না। তদন্তে নাক গলাবে না।

অভিষেক-রুজিরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা দিল্লির বদলে কলকাতায় ইডি-র মুখোমুখি হতে রাজি। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা হাই কোর্টে লাহোরের মামলার রায়ের নজির তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘তদন্তকারী সংস্থা কী ভাবে তদন্ত করবে, সেটা শুধুমাত্র তার বিষয়। আদালতের মতামত মেনে তা চলবে না। কাকে, কোথায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে, সেটাও তদন্তকারী সংস্থার অধিকারের মধ্যে পড়ে।’

দিল্লি হাই কোর্টও লাহৌরের সেই মামলার রায়ের ভিত্তিতেই অভিষেকদের আর্জি খারিজ করে জানিয়েছে, তদন্ত কোন পথে চলবে, তা তদন্তকারী সংস্থাই ঠিক করবে। আদালত সেখানে নাক গলাবে না। অভিষেকের অভিযোগ ছিল, ইডি তাঁকে কয়লা পাচারের মামলার বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছে। এ ক্ষেত্রেও ব্রিটিশ সম্রাট বনাম খ্বাজা নাজির আহমেদ মামলার রায়কে নজির তুলে ধরে দিল্লি হাই কোর্ট বলেছে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে বলেই বদ মতলব রয়েছে বলা যায় না।

কে এই খ্বাজা নাজির আহমেদ? কেনই বা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তাঁর মামলা এত গুরুত্বপূর্ণ?

আইনের ইতিহাস বলছে, এই ঘটনার শুরু পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লালা হরকিষেণ লাল থেকে। লাহোরের এই শিল্পপতি, রাজনীতিক ১৯২৫-এ পিপলস ব্যাঙ্ক অব নর্দার্ন ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর ব্যবসা লাটে ওঠে। তাঁকে দেউলিয়া ঘোষণা করার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। সম্পত্তি আটক করা হয়। তত দিনে লাহোর হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হয়ে এসেছেন ডগলাস ইয়ং। তিনি লালার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ করেন আইনজীবী খ্বাজা নাজির আহমেদকে। লাহোরের যাবতীয় আটক হওয়া সম্পত্তিরই তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে খ্বাজাকে নিয়োগ করা হতে থাকে। খ্বাজার সঙ্গে ইয়ংয়ের গোপন আঁতাত ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। লালার পুত্র কে এল গউবার অভিযোগে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। খ্বাজার বাড়িতে হানা দেয়।

পুলিশি হানার সময় প্রধান বিচারপতি ইয়ং মানালিতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। তিনি সেখান থেকেই তার করে তদন্ত বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তার পরে ফিরে এসে আদালতে বসেও একই রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধেই পঞ্জাব সরকার প্রিভি কাউন্সিলে মামলা করে। ১৯৪৪-এর ১৭ অক্টোবর প্রিভি কাউন্সিল মত দেয়, আইন অনুযায়ী তদন্ত করা পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থার দায়িত্ব। আদালত কোনও ভাবেই সেই মামলায় হস্তক্ষেপ করবে না। আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, একমাত্র পুলিশের এফআইআর-এ অপরাধের উল্লেখ না থাকলে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে। কয়লা পাচার কাণ্ডে ইডি-র তদন্তের ক্ষেত্রে সে যুক্তি খাটে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement