মহুয়া মৈত্র। — ফাইল চিত্র।
আবার বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে সমন পাঠাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ১১ মার্চ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের একটি মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন অফিসারেরা।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়েছিল মহুয়াকে। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের মামলাতেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল ইডি। তখন তিনি হাজিরা দেননি। তিন সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। ইডি সূত্রে খবর, বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে মহুয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। তদন্তকারী অফিসারদের নজরে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের কয়েকটি ঘটনা রয়েছে। একটি নন-রেসিডেন্ট এক্সটারনাল (এনআরই) অ্যাকাউন্টের লেনদেনও তাঁদের নজরে রয়েছে।
‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’কাণ্ডে ইতিমধ্যে মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই। এই নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেছে সংসদীয় কমিটি।
গত ডিসেম্বরে লোকসভার সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’কাণ্ডে মহুয়াকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করেছিল লোকসভার এথিক্স কমিটি। ৪৯৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট তারা জমা দেয়। ওই রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য সময় চেয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির তরফেও স্পিকারের কাছে সময়ের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু স্পিকার সময় দেননি। বহিষ্কারের পর মহুয়া জানিয়েছিলেন, এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন তিনি। আগামী ৩০ বছর লোকসভার ভিতরে এবং বাইরে লড়াই করবেন। এই বহিষ্কারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে এখনও মামলাটি বিচারাধীন।
সূত্রের খবর, এথিক্স কমিটির রিপোর্টে তৃণমূলের সাংসদের লোকসভার লগইন আইডি অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টিকে ‘অনৈতিক আচরণ’ এবং ‘সংসদের অবমাননা’ হিসাবে অভিহিত করা হয়। এথিক্স কমিটি রিপোর্টে মহুয়াকে কড়া শাস্তি দেওয়ার সুপারিশও করা হয়। রিপোর্টে আরও সুপারিশ করা হয় যে, মহুয়ার সাংসদপদ যেন খারিজ করা হয়। রিপোর্টে মহুয়ার বিরুদ্ধে সরকারি তদন্তের কথাও বলা হয়েছে। তাতে মহুয়া এবং দর্শন হীরানন্দানির মধ্যে নগদ অর্থ লেনদেনের ‘মানি ট্রেইল’-এরও তদন্ত করানোর সুপারিশ করা হয়। রিপোর্টে দাবি, ওই আর্থিক বিষয়ে তদন্ত করার মতো প্রযুক্তিগত কাঠামো কমিটির নেই। তাই যেন সরকার তার তদন্ত করে।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যবসায়ী দর্শনের কাছ থেকে উপহার ও টাকা নিয়ে সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নে তিনি আদানির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। নিজের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ডও দর্শনকে মহুয়া দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের। একই অভিযোগ করেছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব আইনজীবী জয় দেহাদ্রাই। মহুয়া জানান, বন্ধু দর্শনকে তিনি আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন শুধুমাত্র তাঁর প্রশ্নগুলি ‘টাইপ’ করে দেওয়ার জন্য। কৃষ্ণনগরের বহিষ্কৃত সাংসদের এ-ও দাবি, ওই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা বিধি নেই।