শাহজাহান শেখ। — ফাইল চিত্র।
শাহজাহান শেখ দাবি করেন, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হেফাজতে তাঁকে দিয়ে জোর করে বয়ান লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর সেই বয়ান প্রত্যাহারের আবেদনের সোমবার বিরোধিতা করেছে ইডি। বিচারক প্রশ্ন তুলেছেন, ওই আবেদনের বক্তব্য ভুল না ঠিক, তা কী ভাবে বোঝা যাবে? বিচারের সময় এই আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক। শাহজাহানের তরফে জামিনের আবেদন করা হয়নি। তাঁকে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফজাতে পাঠিয়েছেন বিচারক।
সোমবার ইডির বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়েছিল শাহজাহানকে। এর আগে শনিবার ইডির হেফাজত শেষে শাহজাহানকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। ইডি তাঁকে জোর করে বয়ান লিখিয়ে নিয়েছে বলে সেখানেই অভিযোগ করেন শাহজাহান। সোমবার বিচারক বলেন, ‘‘এই পর্যায়ে এই পিটিশনের মানে কী? পিটিশনের বক্তব্যটি ঠিক না ভুল, এখন কী করে বোঝা যাবে?’’ ইডির তরফে যদিও পিটিশনের বিরোধিতা করা হয়। আইনজীবী জানান, তাঁরা এই পিটিশন ‘ডিসমিস’ করতে চাইছেন। বিচারক বলেন, ‘‘বিচারের সময় এই পিটিশনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’’
শুনানি শেষে শাহজাহানের আইনজীবী জানান, আইন মেনে ১৪ দিন অন্তর কোর্টে হাজির করাতে হবে। তাঁদের তরফে জামিনের দরখাস্ত করা হয়নি। তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার আদালতে ইডি দাবি করেছে, শাহজাহান জেরায় জানিয়েছেন, সন্দেশখালি-সহ উত্তর ২৪ পরগনায় গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তিনি মনোনীত করতেন। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শাহজাহানের আইনজীবী বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি একটি দলে রাজ্য কমিটি থাকে। পরিচালন কমিটি থাকে। এক জন লোক কেন্দ্রীয় কমিটিকে প্রভাবিত করে রাজ্য চালাবেন, তা হয় না।’’ তিনি এ-ও জানান, ‘প্রভাব’ দিয়ে টাকা নয়ছয় (পিএমএলএ) মামলা হতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘ইডি তদন্তের ব্যাপকতা থাকা দরকার। প্রভাব দিয়ে কি ইডি মামলা হবে? পিএমএলএ মামলা হবে?’’
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহজাহানকে নিয়ে বক্তব্য লিখিত আকারে তারা জমা দিয়েছে আদালতে। তিনি জেরায় কী কী জানিয়েছেন, তা-ও রয়েছে নথিতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছে, ১১ এপ্রিল শাহজাহান জেরায় যে বয়ান দিয়েছেন, তাতেই সন্দেশখালি তথা উত্তর ২৪ পরগনায় নিজের প্রভাবের কথা জানিয়েছেন। জেলার অন্যান্য পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির পাশাপাশি সন্দেশখালির প্রার্থী এবং পদাধিকারী কে হবেন, সেটা তিনিই ঠিক করতেন। শনিবার শাহজাহান আইনজীবী মারফত আদালতে পাল্টা দাবি করেন, ইডি হেফাজতে তাঁকে দিয়ে জোর করে বয়ান লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বয়ান না দিলে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে মিথ্যা মাদক এবং মহিলা পাচার মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও ইডি ভয় দেখিয়েছে বলে দাবি শাহজাহানের। সেই কারণেই তিনি ইডিকে বয়ান দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ওই বয়ান প্রত্যাহারও করতে চেয়েছেন সন্দেশখালির বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা। আদালতে শাহজাহানের আবেদনের বিরোধিতা করেন ইডির আইনজীবী।