যুবনেতা কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা কেন গিয়েছিল সোমার অ্যাকাউন্টে? — ফাইল ছবি।
নিয়োগ মামলায় ধৃত তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষ বলছেন, তিনি সোমা চক্রবর্তী নামে কাউকে চেনেন না। এ দিকে ইডি সূত্রে খবর, কুন্তলের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত নথি বলছে, কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে সোমার কাছে গিয়েছে প্রচুর টাকা। স্বভাবতই নিয়োগ মামলার তদন্তে এই টাকার উৎস এবং গন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইডি সূত্রে দাবি, সোমা তাঁদের জানিয়েছেন, ব্যবসার জন্য তাঁকে ঋণ দিয়েছিলেন কুন্তল।
নিয়োগ মামলায় একের পর এক চরিত্রের আনাগোনা। ‘রহস্যময়ী’ হৈমন্তী গঙ্গাপাধ্যায়ের পর এ বার শিরোনামে চলে এলেন আরও এক নারী। সোমা চক্রবর্তী। ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে দেখাও করে গিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, তাঁরা কুন্তলের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত নথি পরীক্ষা করে দেখতে গিয়ে পেয়েছেন, মোট সাড়ে ছ’কোটি টাকা তৃণমূলের যুবনেতার অ্যাকাউন্টে এসেছে, তার পর আবার তা অন্য অ্যাকাউন্টে চলেও গিয়েছে। সেই লেনদেন খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে পাওয়া যায়, যুবনেতার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা গিয়েছে জনৈক সোমার অ্যাকাউন্টে। কে তিনি? খোঁজখবর করে তদন্তকারী আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, সোমা পেশায় ব্যবসায়ী। একটি বিউটি পার্লার রয়েছে তাঁর। যুবনেতা কুন্তলের সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? কেন বিপুল অর্থ কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে সোমার অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল? কুন্তল কি তাঁর ব্যবসার অংশীদার ছিলেন? এ বিষয়ে জানতে ইডি শুক্রবার তলব করছিল সোমাকে। সোমা এসে ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন। ইডি সূত্রের খবর, সোমা তাঁদের জানিয়েছেন, কুন্তল তাঁকে ব্যবসার জন্য টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। গোয়েন্দারা যে লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছেন, তা আসলে ঋণেরই টাকা। এই পরিস্থিতিতে তদন্তকারীদের একাংশের প্রশ্ন, কুন্তল কী কারণে সোমাকে ব্যবসার জন্য ঋণ দিলেন? ঋণ নিয়েছিলেন সে কথা সোমা স্বীকার করেছেন কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয় সেই ঋণের অর্থ সোমা পরিশোধ করেছিলেন কি না। যদিও তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, কুন্তল কিন্তু সোমার নাম করেননি। বরং তিনি সোমা নামে কাউকে চেনেন না বলেও তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন। সোমার আবির্ভাব, কুন্তলের আর্থিক নথি খতিয়ে দেখার সময়। ফলে কে সোমা এবং কুন্তলের সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক, তা নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ছে। এই রহস্যের সমাধান হলে নিয়োগ দুর্নীতির অর্থের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, সোমা যে এলাকায় এক সময় থাকতেন সেখানে গিয়েও তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সোমা এই এলাকায় থাকতেন ঠিকই কিন্তু বিয়ের পর আর থাকেন না।
সম্প্রতি কুন্তল দাবি করেন, গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত। এর পরই হৈমন্তীকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়। যদিও গোপাল এবং হৈমন্তী দাবি করেন, তাঁরা কোনও রকম দুর্নীতিতে জড়িত নন। হৈমন্তীকে নিয়ে সেই বিতর্ক মিটতে না মিটতেই সোমা নামে আরও এক ‘রহস্যময়ী’র প্রসঙ্গ উঠে এল নিয়োগকাণ্ডে।