Goutam Kundu

গৌতমের গাড়ি বিক্রি করতে চেয়ে কোর্টে ইডি

ইডি-র একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বিক্রির জন্য আলাদা আলাদা কমিটি তৈরি হয়েছে। এগুলিকে ‘অ্যাসেট ডিসপোজ়াল কমিটি’ বলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৭
Share:

ফাইল চিত্র।

ব্যক্তিগত জীবনে নাকি তাঁর শৌখিনতার অন্ত ছিল না। বিলাসে মোড়া ছিল তাঁর দিনলিপি। আর সেই বিলাসবহুল জীবনের অঙ্গ ছিল দামি বিদেশি গাড়ি।

Advertisement

রোজ় ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর ভাঁড়ারে ছিল মার্সিডিজ়, বিএমডব্লিউ, আওডি ও ফারারি। বিদেশে গিয়ে ছয় দরজার লিমুজ়িন দেখে এসে ভারতে তেমন একটি লিমুজ়িনও তিনি তৈরি করিয়েছিলেন। শহরের রাস্তায় সেই লিমুজ়িন চড়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। পরে বাংলা ছবিতে সেই গাড়ি ব্যবহারও করা হয়েছিল।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে গৌতমকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেফতার করার পর থেকে সেই সব গাড়ি, তাঁর সম্পত্তির অঙ্গ হিসেবে বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয়। এ বার সেই গাড়িগুলি বিক্রি করে টাকা তোলার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করল ইডি। কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআইয়ের বিশেষ এজলাসে এই আবেদন জমা পড়েছে। যে সব সাধারণ মানুষ এখনও রোজ় ভ্যালির কাছ থেকে টাকা পাবেন, এই গাড়ি বিক্রির টাকা তাঁদের ফিরিয়ে দিতেই এই আবেদন করা হয়েছে বলে ইডি কর্তারা জানিয়েছেন। তবে গত পাঁচ বছর ধরে অযত্নে পড়ে থাকার ফলে গাড়িগুলির বর্তমান হাল কি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অচল গাড়ি বিক্রি করে কত টাকা উঠবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, আরও আগে এই আবেদন করা হয়নি কেন।

Advertisement

ইডি-র একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বিক্রির জন্য আলাদা আলাদা কমিটি তৈরি হয়েছে। এগুলিকে ‘অ্যাসেট ডিসপোজ়াল কমিটি’ বলা হয়। রোজ় ভ্যালির ক্ষেত্রে বিচারপতি দিলীপ শেঠকে চেয়ারম্যান করে এমন একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। এই কমিটির নির্দেশেই আদালতে গাড়ি বিক্রির জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে, নিয়ম অনুযায়ী, এ বার ইডি-র এই আবেদনের কথা মামলায় মূল অভিযুক্ত এবং ওই গাড়িগুলির মালিক গৌতমকে জানানো হবে। তিনি এই বিক্রির বিষয়ে সম্মতি দিলে তবেই আদালত থেকে অনুমতি পাওয়া যাবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

ইডি-র একটি সূত্র জানিয়েছে, মোট ১২টি এমন গাড়ি কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে। তার মধ্যে গোটা চারেক বিদেশি গাড়ি ছাড়াও দামি দেশি গাড়িও রয়েছে। এই গাড়িগুলি এখনও রোজ় ভ্যালির বিভিন্ন অফিসের সামনে পড়ে রয়েছে। এমনকি কলকাতায় গৌতমের বাড়ির সামনেও বিদেশি গাড়ি পড়ে রয়েছে। ইডি-র এক কর্তার কথায়, “পাঁচ বছরের বেশি সময়ে ধরে গাড়ি বসে থাকলে তার যন্ত্রপাতি বিগড়োতে শুরু করে। তা ছাড়াও গাড়ির দেহাংশেরও ক্ষতি হয়।” গত পাঁচ বছর ধরে সেই গাড়িগুলি কী অবস্থায় পড়ে রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়নি। আশঙ্কা, সেখান থেকে যন্ত্রাংশ খুলে নেওয়া হতে পারে। আদৌ এ সব গাড়ির চলার মতো দশা রয়েছে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ফলে, এখন বিক্রি করার নির্দেশ পেলেও তুলনায় কম দাম পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবুও সব গাড়ি বিক্রি করে প্রায় ৫ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

রোজ় ভ্যালির নামে যে হোটেলগুলি ছিল সেগুলিও গৌতম গ্রেফতার হওয়ার পরে বেআইনি ভাবে অন্য নামে হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে বলে ইডির অভিযোগ। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, প্রথমে হোটেলগুলি সাব-লিজ করা হচ্ছিল। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, লিজের নাম করে আদতে সেগুলি অন্য সংস্থার হাতে হস্তান্তর করে দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে ইডি। এখানেও প্রশ্ন উঠেছে, এত বছরে এ দিকে নজর দেওয়া হয়নি কেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement