(বাঁ দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র এবং কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’ কুন্তল ঘোষের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছেন বলে ইডির দাবি। সেই টাকার পরিমাণ ৭০ লক্ষ। সুজয় শুধু একাই টাকা নেননি, তিনি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও টাকা দিতে বলেছিলেন।
ইডির দাবি, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হুগলি তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তলের যে বয়ান তারা রেকর্ড করেছিলেন, সেখানে কুন্তল জানান, ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীকে বেআইনি ভাবে টেট পাশ করিয়ে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করাতে চেয়েছিলেন কুন্তল। সুজয় তখন কুন্তলকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, পার্থের সঙ্গে কথা বললেই তাঁর কাজ হয়ে যাবে।
এই সময়েই কুন্তল সুজয়কে দেন ৭০ লক্ষ টাকা। সুজয়ের কথাতেই তিনি পার্থকে দেন আরও ১০ লক্ষ টাকা। যদিও ইডি জানিয়েছে, ৩০ মে ‘কালীঘাটের কাকু’ তাঁদের প্রশ্নের মুখে এই লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অপর ধৃত তাপস মণ্ডলও ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে বেআইনি নিয়োগ সংক্রান্ত যোগাযোগের কথা ইডিকে জানিয়েছেন বলে খবর তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে। গত বছর নভেম্বরে তাপসের বয়ান অনুযায়ী, ৩২৩ জন টেট প্রার্থীর তালিকা সুজয়কে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর কাছ থেকে সেই তালিকা পাঠানো হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে।
ইডি আরও জানিয়েছে, সুজয় তাঁর বয়ানে দাবি করেছেন, তিনি মানিককে ২০২১ সালের আগে চিনতেন না। মানিকের সঙ্গে তাঁর কোনও রকম যোগাযোগ আগে ছিল না। কিন্তু তদন্তে ইডির হাতে এসেছে অন্য তথ্য। মানিকের হোয়াটস্অ্যাপ কথোপকথন ঘেঁটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা দেখেছেন, তাঁর সঙ্গে সুজয়ের যোগাযোগ রয়েছে অন্তত ২০১৮ সাল থেকে। ওই সময় থেকেই মানিককে বহু টেট প্রার্থীর নথি সুজয় পাঠিয়েছিলেন। পাঠানো হয়েছিল মার্কশিট এবং অ্যাডমিট কার্ডও। অর্থাৎ, সুজয় তথ্য গোপন করতে চাইছেন, সত্যি কথা বলছেন না, দাবি ইডির।
‘কালীঘাটের কাকু’কে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে ইডি। ওই দিন সকালে সিজিও কমপ্লেক্সে তিনি হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর বুধবার তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। ইডি ‘কাকু’কে আপাতত ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত আরও খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। আরও ১৪ দিন ইডি হেফাজতেই থাকতে হবে সুজয়কে।
অন্য দিকে, সুজয়ের আইনজীবী সেলিম রহমান আদালতে দাবি করেছেন, এই গ্রেফতারি বেআইনি। ইডি-র তরফে কোনও অ্যারেস্ট মেমো দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি গ্রেফতারির আগে ‘কাকু’র বেহালার বাড়িতে যে তল্লাশি চালানো হয়েছিল, সে ক্ষেত্রেও মানা হয়নি নিয়ম। আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, সুজয়ের কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে। তাঁর স্ত্রীও অসুস্থ। তাঁদের কন্যা বিবাহিত। অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনা করেন সুজয়ই। আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী। যদিও সেই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে।