Recruitment Scam

খাচ্ছেন না সুজয়কৃষ্ণ! অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, আশঙ্কা ইডির, চাওয়া হল ১৪ দিনের হেফাজত

ইডির আইনজীবী বিচারককে জানান, উনি কিছু না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ইডির আধিকারিকেরা মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকবে তাঁর কাছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ১৭:২০
Share:

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।

‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র কিছুই খাচ্ছেন না। বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তাঁকে পেশ করার পর এমনটাই দাবি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এর পাশাপাশি, নিজেদের আশঙ্কার কথাও আদালতকে জানায় ইডি। ইডির আইনজীবী বিচারককে জানান, উনি কিছু না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ইডির আধিকারিকেরা মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকবে তাঁর কাছে। এর ফলে তদন্তও ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করার পর বুধবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতে ইডির তরফে জানানো হয়, সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় স্বাস্থ্যপরীক্ষাতেও বিলম্ব হয়েছে। আদালতে ইডির কৌঁসুলি ফিরোজ এডুলজি জানান, যে সব মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেখান থেকে বহু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ফোন থেকে বেশ কিছু তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

আদালতে ইডি এ-ও জানায় যে, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার সঙ্গে সুজয়কৃষ্ণের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। এই বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে ‘কালীঘাটের কাকু’কে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে তদন্তকারী সংস্থাটি। তাই বুধবার সুজয়কৃষ্ণকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছেন ইডির আইনজীবী। সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী সেলিম রহমান আদালতে অভিযোগের সুরে জানান, মঙ্গলবার রাতে সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী সিজিও কমপ্লেক্স (ইডি দফতর)-এ ছিলেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতারির বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

Advertisement

ইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত এবং অভিযুক্তদের (যাঁদের মুখে বার বার ‘কালীঘাটের কাকু’ নামটি শোনা গিয়েছে) বয়ান সামনে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সুজয়কৃষ্ণকে। কিন্তু তিনি প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর এড়িয়ে যান। এমনকি মোবাইল ফোনে তাঁর সামনে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হলেও, তিনি তা মানতে অস্বীকার করেন। ইডি সূত্রে খবর, সুজয়কৃষ্ণ যে তিনটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, তার মধ্যে একটি সংস্থার চার আধিকারিককে আগেই তলব করেছিল ইডি। তাঁদের বয়ানও সুজয়কৃষ্ণের সামনে তুলে ধরা হয়। সেই বয়ানের ভিত্তিতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান বলে ইডি সূত্রে খবর। তার পরই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে (যেখানে ইডির দফতর রয়েছে) হাজিরা দেন সুজয়। ইডি দফতরে প্রবেশের সময় জানিয়েছিলেন যে, তিনি যথেষ্ট ‘আত্মবিশ্বাসী’। রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আগেই সিবিআই গ্রেফতার করেছিল বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলকে। তাঁর মুখেই প্রথম ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা শোনা যায়। নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম উঠে আসে গোপাল দলপতিরও। তাঁর মুখেও ‘কাকু’র নাম শোনা গিয়েছিল। এর পরেই গোয়েন্দাদের আতশকাচের তলায় চলে আসেন সুজয়কৃষ্ণ। সিবিআই সুজয়কে দু’বার তলব করে। প্রথম বার সিবিআই দফতরে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বার নিজের আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সুজয় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি তিনি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েও দিয়েছেন সিবিআই দফতরে। একই সঙ্গে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও তিনি পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।

গত ২০ মে সুজয়ের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। ওই দিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সুজয় এক সময় অভিষেকের অফিসে কাজ করতেন। ‘কাকু’র সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩টি সংস্থাতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement