এক নয়, দুই নয়, একেবারে ৩২ হাজার ফুট! পৃথিবীর মাটিতে গভীরতম গর্ত খুঁড়তে চলেছে চিন। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে তার তোড়জোড়।
চিনের উত্তর-পশ্চিমে বিশাল অংশ জুড়ে শিনজিয়াং প্রদেশ। এই এলাকা খনিজ তেল সমৃদ্ধ। সেখানেই এই গভীর গর্ত খুঁড়তে শুরু করেছে বেজিং।
মঙ্গলবার শিনজিয়াঙে গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহাকাশের পাশাপাশি পৃথিবীর গভীরেও প্রযুক্তির ছাপ ফেলতে চলেছে শি জিনপিংয়ের সরকার।
চিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শিনজিয়াঙে যে গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তার গভীরতা হবে ১০ হাজার মিটার। অর্থাৎ, পৃথিবীর বুকে ৩২ হাজার ৮০৮ ফুটের গর্ত খুঁড়বে চিন।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার (২৯০৩০ ফুট)। চিনের গর্ত খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হলে তা হবে এভারেস্টের উচ্চতার চেয়েও গভীর।
শিনজিয়াঙে গর্ত খোঁড়ার কাজ যে দিন শুরু হয়েছে, সে দিন সকালেই মহাকাশ অভিযানে নতুন নজির গড়েছে চিন। গোবি মরুভূমি থেকে প্রথম বার অসামরিক নভোশ্চরদের নিয়ে মহাকাশে উড়েছে চিনা মহাকাশযান।
পৃথিবীর ‘চামড়া’ ফুঁড়ে (ভূত্বক) যে গর্ত চিন খুঁড়তে শুরু করেছে, তা অন্তত ১০টি মহাদেশীয় স্তর ভেদ করবে। মহাদেশীয় স্তর আসলে পাথরেরই নানাবিধ আস্তরণ।
চিনের এই গর্ত একে একে মহাদেশীয় স্তর ভেদ করতে করতে পৌঁছে যাবে ভূত্বকের একেবারে শেষ স্তরে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সেখানে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ বছরের পুরনো পাথর রয়েছে।
চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং একে পৃথিবীর গভীরে অন্বেষণ অভিযান বলে অভিহিত করেছেন। ২০২১ সালে বিজ্ঞানীদের একটি সম্মেলনে গিয়ে এই প্রকল্পে দেশের আরও উন্নতি কামনা করেছিলেন তিনি।
কিন্তু কেন এই উদ্যোগ? পৃথিবীর গভীরে গিয়ে কী লাভ হবে বেজিংয়ের? জিনপিং কি অন্য কোনও গোপন পরিকল্পনা লুকিয়ে রেখেছেন এই গভীর অভিযানের আড়ালে?
চিনা বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এই ধরনের কাজের ফলে ভূগর্ভে সঞ্চিত ধাতু এবং শক্তির উৎস সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। নানা খনিজ পদার্থের সম্ভার চিহ্নিত করা যাবে এর মাধ্যমে।
শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কেও আগে থেকে নিশ্চিত হওয়া যাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতের সম্ভাবনা জানার প্রযুক্তিতে আরও উন্নতি করতে পারবে চিন।
চিনের খোঁড়া এই ৩২ হাজার ফুটের গর্তকে অবশ্য ‘পৃথিবীর গভীরতম’ বলা ঠিক হবে না। কারণ, সেই তকমা এখনও পর্যন্ত আছে রাশিয়ার কাছে।
রাশিয়ার ‘কোলা সুপারডিপ বোরহোল’-এর গভীরতা ১২ হাজার ২৬২ মিটার (৪০ হাজার ২৩০ ফুট)। ১৯৮৯ সালে এই গর্ত খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। গর্তটি খুঁড়তে সময় লেগেছিল ২০ বছর।
প্রযুক্তির উন্নতিতে গর্ত খোঁড়ার কাজ এখন আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। তাই ৩২ হাজার ফুটের গর্ত খুঁড়তে হয়তো ২০ বছর সময় নেবে না চিন। তা সম্পূর্ণ হলে কী কী হতে পারে, সে দিকে নজর রেখেছেন বিজ্ঞানীরা।