(বাঁ দিকে) শাহজাহান শেখ। আলমগির (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
শাহজাহান শেখের সংস্থা এসকে সাবিনা ফিশারিজ থেকে দু’কোটি এক লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তাঁর ভাই আলমগির। মাছ সরবরাহের নামে আলমগিরকে ওই টাকা দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনও মাছ সরবরাহ করা হয়নি। আদালতে শুক্রবার এমনটাই দাবি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাদের আরও দাবি, আসলে জমি দখলের টাকা পাচার করতেই আলমগিরের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছিল। শাহজাহানের দুই ‘শাগরেদ’ শিবু এবং দিদার বক্স মোল্লাকেও দেওয়া হয়েছে টাকা। ২২ এপ্রিল পর্যন্ত তিন জনকে ইডি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার ইডি বিশেষ আদালতে শাহজাহানের ভাই আলমগির এবং দুই শাগরেদ শিবু, দিদারকে হাজির করানো হয়। ইডির দাবি, শাহজাহানের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা এস কে সাবিনা, সাবিনা ফিশারিজ থেকে দু’কোটি এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন আলমগির। টাকা পেয়েছেন দিদার এবং শিবুও। মাছ সরবরাহের নামে এই টাকা দেওয়া হলেও বাস্তবে একটা মাছও সরবরাহ করা হয়নি বলে আদালতে দাবি করেছে ইডি। তাদের দাবি, জমি দখলের টাকা পাচার করতে আলমগিরের অ্যাকাউন্ডে টাকা রাখা হয়েছে। ‘সাইফনিং’ করা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ইডির তরফে জানানো হয়েছে, শাহজাহানের জমি, ভেড়ি দখলের তদন্তে নেমে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
শুক্রবার আদালতে ইডি আরও দাবি করেছে, এসকে সাবিনা ফিশারিজ থেকে দিদার পেয়েছেন সাত কোটি, ৭৪ লক্ষ টাকা ৫৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে দু’কোটির উপর টাকা নগদ তুলে নিয়েছেন তিনি। শিবপ্রসাদ হাজরা পেয়েছেন ৫০ লক্ষ টাকা। তবে ওঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। ইডি জানিয়েছে, বিভিন্ন জনের বয়ান থেকে জানা গিয়েছে, এই টাকার একটা অংশ অভিযুক্তেরা পেয়েছিলেন।
আলমগির, দিদার এবং শিবুকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছে ইডি। রেশন দুর্নীতিকাণ্ড-সহ সন্দেশখালির জমি দখল এবং ভেড়ি দখল সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। ইডি এই তিন জনকেই আদালতে হাজির করানোর জন্য বুধবার বিচার ভবনে আবেদন করেছিল। সেই মতোই তাঁদের শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়।
তিন জনেই এখন বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। এই হেফাজতে নেওয়া নিয়ে সওয়াল করেছেন আলমগিরের আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, তিন জনকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখায়নি ইডি। অর্থাৎ, তাঁদের যে গ্রেফতার করেছে, তা দেখায়নি। তা হলে কী ভাবে তাঁদের হেফাজতে চাইছে? শাহজাহানকে বসিরহাটের আদালতে গিয়ে শোন অ্যারেস্ট করেছিল ইডি। আলমগিরের আইনজীবীর দাবি, এসিজেএম বসিরহাটের কাছে গিয়ে জেরা করার আবেদন করেছিল ইডি। তার পর শাহজাহানকে যে পদ্ধতিতে গ্রেফতার করেছে, সে ভাবে করা উচিত ছিল আলমগির, দিদার, শিবুকে। তার পর হেফাজতে নেওয়া হোক। একই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারকও। তিনি প্রশ্ন করেন, গ্রেফতার না করে কী ভাবে তিন জনকে হেফাজতে চাইছে ইডি? যদিও শেষে তিন জনকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ইডি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। দিদারের আইনজীবী নাজমুল আলম সরকার আদালতে দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেল শুধুই কর্মচারী। টাকার বিষয়ে কিছু জানেন না। এই দাবি মানতে চায়নি ইড।
সন্দেশখালি এবং ন্যাজাট থানায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মহিলা নির্যাতন, জমির জবরদখল, স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর জুলুমবাজির যে সমস্ত অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার মধ্যে শাহজাহান ছাড়াও নাম ছিল শিবু, আলমগির, দিদার এবং অন্যদের। ইডি শাহজাহানের বেআইনি কাজকর্মের তদন্তে নেমে এ বার সেই দিকেই নজর দিয়েছে। যে ব্যাপারে এ বার তাঁর সহযোগীদেরও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে তারা।