ঝাড়গ্রামে পুজোমণ্ডপের থিমের উদ্বোধন কুণাল ঘোষ, বিরবাহা হাঁসদা-সহ অন্যান্য। — নিজস্ব চিত্র।
জুড়ে গেল মহানগরী কলকাতা এবং জঙ্গলমহলের অরণ্য শহর ঝাড়গ্রাম। ১৮১ কিলোমিটার দূরে থাকা এই দুই শহরকে জুড়ে দিল কলকাতার একটি পুজো। এ বার ৭৮ বছরে পা দিচ্ছে কলকাতার রামমোহন সম্মিলনীর পুজো। সেই পুজোর এ বারের থিম ‘জঙ্গলকন্যা’। শনিবার সেই থিমের উদ্বোধন হল ঝাড়গ্রাম থেকে। অভিনব এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা।
কলকাতার বুকে এক টুকরো জঙ্গলমহল। জঙ্গলকন্যাদের জীবন, শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে মণ্ডপে তুলে ধরতে চান রামমোহন সম্মিলনীর পুজো উদ্যোক্তারা। এ বার তাঁদের পুজোর থিম এমনই চমকপ্রদ। কিন্তু আরও চমকপ্রদ হয়ে উঠল সেই থিমের উদ্বোধন। শনিবার জঙ্গলমহলের মাটিতে দাঁড়িয়ে উদ্বোধন করা হল সেই থিমের। যার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ জঙ্গলমহলের মেয়ে তথা এ রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। ঝাড়গ্রামের রবীন্দ্র পার্কে ধামসা-মাদল বাজিয়ে বর্ণময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন হল থিমের। ছিলেন বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা, উমা সোরেন-সহ ঝাড়গ্রামের সংস্কৃতি জগতের একাধিক মুখ। রামমোহন সম্মিলনীর তরফে ছিলেন চেয়ারম্যান কুণাল ঘোষ, শ্যামল দত্ত, অনির্বাণ সেনগুপ্ত, শৈলেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর পর জঙ্গলমহলের মাটি এবং চারাগাছ পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দেন বিরবাহা। স্থির হয়েছে চতুর্থীর দিন কলকাতায় এই পুজোর উদ্বোধন করবেন বিরবাহা। ঝাড়গ্রামের শিল্পী এবং নাগরিকরাও যাবেন কলকাতা। বিষয়বস্তুর উৎসস্থলে গিয়ে এ ভাবে পুজোর থিমের উদ্বোধন নজিরবিহীন। কলকাতার এই পুজো ঘিরে আবেগতাড়িত ঝাড়গ্রামও। শনিবার কুণাল বলেন, ‘‘জঙ্গলমহল আর কলকাতার সেতুবন্ধন দৃঢ় হোক। যেখানে পুজো হবে আর আজ যেখানে থিমের উদ্বোধন হল সেই দুই জায়গার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার। জঙ্গলের নারীদের অধিকারের লড়াই, তাঁদের শিল্প, হাতের কাজ, সংস্কৃতি, নানা কর্মযজ্ঞ, জীবনধারা ইত্যাদি নিয়েই আমাদের পুজোর থিম। ইটকাঠের শহরের বুকে মায়ের আরাধনা। আর তার থিমের উদ্বোধন করতে জঙ্গল কন্যাদের দেশে আসা। থিমের উদ্বোধন হচ্ছে উৎসস্থলে। এ ভাবে থিমের উদ্বোধন কলকাতায় বা অন্য কোনও পুজোয় হয়নি। যাঁদের হাত ধরে সমাজের মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে তাঁদেরও পুজোয় আমন্ত্রণ জানালাম। মধ্যবিত্ত বাঙালিদের পাড়া সেখানে পুজোর মূল থিম জঙ্গলকন্যা।’’
পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে গাছ তুলে দিচ্ছেন বিরবাহা হাঁসদা। — নিজস্ব চিত্র।
বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিরবাহাও। তিনি বলেন, ‘‘বরাবর কলকাতায় থিমের উদ্বোধন হয়। শালগাছে মোড়া জঙ্গলমহলে এসে সেই থিমের উদ্বোধন হচ্ছে। জঙ্গলমহলের মহিলাদের নিয়ে এ বারের থিম। তাই সেখানকার মানুষের কাছে এসেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। বরাবরই আমরা উপেক্ষিত থাকি। আমাদের জানার চেষ্টা হয় না। কুণাল ঘোষ সেই জানার চেষ্টা করছেন। তার উপর পুজোর থিম করেছেন। এ জন্য আমার খুব ভাল লাগছে।’’
কলকাতার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই পড়বে রামমোহন সম্মিলনীর পুজোমণ্ডপ। সেখানে দেখা যাবে ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, বাঁশপাহাড়ি, জামবনি, ভুলাভেদার দৃশ্য। শিল্পী তাপসী সাহা চক্রবর্তী। সন্দীপ সাহা রূপ দেবেন ‘জঙ্গলকন্যা’র জগৎ।