তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
অর্থের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলা সম্পর্কিত অভিযোগে আরও চাপ বাড়ল তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের উপরে। যে ব্যবসায়ীর হয়ে তিনি আদানি গোষ্ঠী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চাপে ফেলতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ, তা প্রায় মেনে নিয়েছেন সেই ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি। স্বাক্ষর করা ‘হলফনামা’য় হিরানন্দানি মেনে নিয়েছেন যে তিনি মোদী সরকার এবং আদানি গোষ্ঠীকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়াকে ব্যবহার করেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই ওই ‘হলফনামা’র কথা জানিয়েছে।
দুবাই-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির থেকে নেওয়া অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে মহুয়া লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন এমন অভিযোগ তুলে গত রবিবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি পাঠান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। স্পিকারের কাছে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার আর্জিও জানিয়েছেন নিশিকান্ত। আবার আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই মহুয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার লোকসভা স্পিকার মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে লোকসভার এথিক্স কমিটিকে। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এল দুবাইকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির ‘হলফনামা’।
ব্য়বসায়ী হীরানন্দানির ‘হলফনামা’।
নিশিকান্ত এবং দেহাদ্রাইয়ের একই অভিযোগ। তাঁদের দাবি, ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে অর্থ, উপহার নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন মহুয়া। সেই সঙ্গে মোদী এবং শাহের নাম জড়িয়েছেন তিনি। এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার আইনি চিঠিও পাঠিয়েছেন মহুয়া। তাতে নিশিকান্ত এবং দেহাদ্রাইয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। দু’জনেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে জানিয়ে মহুয়ার দাবি, প্রতিশোধস্পৃহা থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। ছবি: টুইটার।
হীরানন্দানি ‘হলফনামা’য় স্বীকার করেছেন যে তিনি মহুয়াকে ব্যবহার করে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্ন তুলেছেন সংসদে। মহুয়া শিল্পপতিকে সংসদের লগ-ইন আইডি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন নিশিকান্ত। সেটাও স্বীকার করেছেন হীরানন্দানি। মহুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপহার নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তাতেও মান্যতা দেওয়া হয়েছে হীরানন্দানির ‘হলফনামা’য়। বলা হয়েছে, মাঝেমাঝেই নানা আব্দার করা হত। দাবি থাকত বিলাসবহুল সামগ্রী, দিল্লির সরকারি বাসভবন সংস্কার করিয়ে দেওয়া, ছুটি কাটানো বা বেড়ানোর খরচের জন্যও দাবি করা হত। সেটা যেমন দেশের বিভিন্ন জায়গায়, তেমন বিদেশেও।হীরানন্দানি আরও জানিয়েছেন, মহুয়ার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ২০১৭ সালে। বেঙ্গল বিজ়নেস সামিটে যোগ দিতে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। পরবর্তী কালে মহুয়ার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। মনে হতে থাকে যে মহুয়ার মাধ্যমে তিনি বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলিতে কাজের সুযোগ পেতে পারেন। কারণ শ্রী গান্ধী, শশী তারুর, পিনাকি মিশ্রের সঙ্গে মহুয়ার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
মহুয়া অবশ্য আগেই এই সব অভিযোগকে অসত্য বলে দাবি করেছেন। প্রথম থেকেই তাঁর অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। আইনি নোটিসে মহুয়া এটাও বলেন যে, তিনি নিশিকান্ত দুবের ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন। সিবিআই ও নিশিকান্তের কাছে অভিযোগ জানানো আইনজীবী দেহাদ্রাইও মহুয়ার ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ছিলেন। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তার পরে দেহাদ্রাই মহুয়াকে হুমকি দিয়ে মেসেজ করেন। তাঁর সরকারি বাসভবনে বিনা অনুমতিতে ঢুকে মহুয়ার পোষা কুকুর ও অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যান। পরে কুকুর ফেরত দেন। বার বার হেনস্থা করায় মহুয়া দেহাদ্রাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। সূত্রের বক্তব্য, রবিবার মহুয়ার কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তা দেহাদ্রাইয়েরই কাজ বলে সন্দেহ। কারণ, এর মধ্যে কিছু ছবিতে তিনি নিজেই মহুয়ার সঙ্গে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, মহুয়া কুকুর চুরির যে অভিযোগ করেছিলেন, তা নিয়ে বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে পুলিশের কাছে পাল্টা কুকুর চুরির অভিযোগ জানিয়েছেন দেহাদ্রাই। অন্য দিকে, সংসদের এথিক্স কমিটি দেহাদ্রাইকে ইতিমধ্যেই তলব করেছে। তাঁকে ২৬ অক্টোবর কমিটির মুখোমুখি হতে হবে। এখনও পর্যন্ত কমিটি মহুয়াকে ডেকেছে কি না জানা যায়নি। তবে মহুয়া রাজ্যেই রয়েছেন। নিজের লোকসভা এলাকায় পুজোর উদ্বোধন করেছেন বৃহস্পতিবার। পঞ্চমীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টও করেন ফেসবুকে।