প্যালেস্তেনীয় প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাসকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।
গাজ়ার হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় তোলপাড় গোটা বিশ্ব। তা নিয়েই প্যালেস্তাইনি প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাসকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের এক্স হ্যান্ডলে নিজেই সে কথা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। মোদী জানান, গাজ়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি প্যালেস্টাইনে মানবিক সাহায্য পাঠানোর কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশিই ইজ়রায়েল নীতি নিয়ে ভারতের অবস্থানের কথাও জানানো হয়েছে মেহমুদকে।
ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আহতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ১২ হাজার। এর মধ্যে মঙ্গলবার গাজ়ার আল আহলি হাসপাতালে আছড়ে পড়ে ক্ষেপণাস্ত্র। নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে বুধবারই। তার পরে আর হিসাব নেই! এই হামলার পরেই ‘সমঝোতার’ বার্তা দিয়েছে হামাস। ইজ়রায়েল অবিলম্বে গাজ়ায় সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করলে ওই দেশের বন্দিদের মুক্তি দেবে তারা। ইজ়রায়েল অবশ্য হাসপাতালে হামলার দায় নিতে রাজি নয়। এই ঘটনার জন্য তারা হামাসকেই দায়ী করেছে। প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে ইজ়রায়েল সফররত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখে। তিনি বলেছেন, ‘‘যা দেখছি, তাতে বুঝতে পারছি, অন্য পক্ষ এটা করেছে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জে প্যালেস্টাইনের দূত রিয়াদ মনসুর ইজ়রায়েলের দিকেই আঙুল তুলেছেন।
গাজ়ার হাসপাতালে হামলার নিন্দা করেছে সব রাষ্ট্রই। তবে পশ্চিমি দেশগুলোর কারও মুখে ইজ়রায়েলের নাম নেই। কারও নাম না করে বুধবারই বলেছিলেন, ‘‘যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের দায় নিতে হবে।’’ এর পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে জানান, তাঁর সঙ্গে প্যালেস্তাইনি প্রেসিডেন্ট আব্বাসের কথা হয়েছে। মোদী জানান, গাজ়ার পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়া নিয়ে প্যালেস্তাইনি প্রেসিডেন্টের কাছে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কড়া নিন্দা করেছেন হিংসা এবং সন্ত্রাসের। এ ছাড়াও মেহমুদকে তিনি জানিয়েছেন, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বে ভারত দীর্ঘ দিন ধরে যে অবস্থান নিয়ে এসেছে, এ বারও সেই অবস্থানেই অটল থাকবে তারা।
ইজ়রায়েল নীতি নিয়ে মোদী সরকারের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস, এনসিপি। তাদের বক্তব্য, প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে মনমোহন সিংহ, এমনকি বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী পর্যন্তও চিরকার প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ভাবে এই প্রথম প্রকৃত সমস্যা না দেখে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পাল্টা বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ভারত সরকার মোটেই প্যালেস্টাইনের বিরোধিতা করেনি। প্রধানমন্ত্রী শুধু হামাসেল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের নিন্দাই করেছেন, প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের দাবিকে অগ্রাহ্য করেনি।
গাজ়ার এই পরিস্থিতির জন্য আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়াকে কাঠগড়ায় তুলেছে হামাস কর্তা ওসামা হামদান। তিনি জানান, যারা ইজ়রায়েলকে সমর্থন করছে, তাদের সকলকে এই হামলার দায় নিতে হবে। মিশর প্রথম আরব দেশ, যারা ইজ়রায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছিল। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাহরাইন ও মরক্কো ইজ়রায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে শুরু করেছিল। সৌদি আরব নিজেই চাইছিল ইজ়রায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ করতে। কিন্তু এখন তারা সকলেই একযোগে ইজ়রায়েলের নিন্দা করছে। বুধবারই ইজ়রায়েলের মিত্র দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন জর্ডনের রাজা আবদুল্লা, মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতা এল-সিসি এবং প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস। উল্টো দিকে, বাইডেনকে ‘সত্যিকারের বন্ধু’ বলে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তাঁকে পাশে বসিয়ে আইএস-এর সঙ্গে হামাসের তুলনা করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘হামাসকে হারাতে সভ্য জগতের উচিত একজোট হওয়া। ওদের আমরা নিশ্চিহ্ন করবই।’’