করিডোর দিয়ে রোগী হাঁটার জায়গায় এভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: বিনোদ দাস।
আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসক-ছাত্রীকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার সূত্রে স্বাস্থ্য-প্রশাসনে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র দাপটের অভিযোগ সামনে এসেছে। উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা পর্যন্ত ওই চক্রের ‘শাখা’ হিসাবে উঠছে ‘বর্ধমান লবি’র নামও। তার মাথাদের মধ্যে যাঁর নাম সামনে আসছে, তিনি বর্ধমানের বাসিন্দা। তবে এমবিবিএস করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে। অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যালে রেডিয়োলজিতে আরএমও হিসাবে তিনি যোগ দেওয়ার পরেই, ‘বর্ধমান লবি’ ডানা মেলতে শুরু করে। গত দু’-এক দিনে সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্টার (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ছড়িয়েছে ‘বর্ধমান-সিন্ডিকেট’ নিয়ে। অভিযোগ করা হয়েছে এই ‘সিন্ডিকেট’-এর শাসানি-হুমকি নিয়ে। মেডিক্যাল কলেজের এক প্রাক্তন অধ্যক্ষ, প্যাথলজি বিভাগের এক প্রাক্তন চিকিৎসক, কিছু প্রাক্তন ইন্টার্নের নামও উঠেছে সেখানে। তবে পোস্টারে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা অভিযোগ মানেননি।
চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, করোনা-পর্বে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রশ্রয়েই ডালপালা ছড়ায় ‘বর্ধমান শাখা’। সেই সময়ে বর্ধমান মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ছিলেন সুহৃতা পাল (যাঁকে সন্দীপ ঘোষের পরে আর জি করে এবং তার পরে বারাসত মেডিক্যালে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে)। তিনি এই ‘লবি’র কথা শুনে কলেজ পরিচালনা করতেন বলে দাবি। পড়ুয়া থেকে চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র নির্দেশ মেনে বর্ধমান মেডিক্যাল, সাগর দত্ত মেডিক্যাল-সহ রাজ্যের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে ‘বর্ধমান শাখা’।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-প্রশাসনে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র এক কর্তার ‘আর্শীবাদ’ নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে ‘আরএমও’ হয়ে এসেছিলেন শহরের নারায়ণদিঘির বাসিন্দা চিকিৎসক অভীক দে। অভিযোগ, ‘তৃণমূলপন্থী’ দু’-তিন জন চিকিৎসককে নিয়ে ‘গোষ্ঠী’ তৈরি করে তাঁরা মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা-প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন। পরে, চিকিৎসকদের ‘পোস্টিং’ নিয়ে প্রভাব খাটান। বর্ধমান মেডিক্যালের এক চিকিৎসক বলেন, “বর্ধমান শাখা সক্রিয় হওয়ার পরে, বর্ধমান মেডিক্যালে আর বাইরের কেউ অধ্যক্ষ বা সুপার পদে আসেননি। বরং, বর্ধমান মেডিক্যাল থেকেই অন্য জায়গায় গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।”
গত দু’-এক দিনে সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে ‘থ্রেট সিন্ডিকেট অ্যাট বিএমসিএইচ’-এর ডিজিটাল পোস্টার (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) ছড়িয়েছে। সেখানেই অভীক দে-র নেতৃত্বে কয়েক জন চিকিৎসক ও প্রাক্তনীর নাম-ছবি রয়েছে। সুহৃতা পালের ছবিও রয়েছে। পোস্টারে নাম থাকা প্রাক্তনীদের একাংশের দাবি, “ওই পোস্টার দেখেছি। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ ভাবে সামাজিক হেনস্থা ও কালিমালিপ্ত হতে হবে ভাবিনি!” সুহৃতার সঙ্গে শুক্রবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি ফোন কেটে দেন। মেসেজের জবাব দেননি।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামীর অভিযোগ, “উত্তরবঙ্গ থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্ধমান-সহ পাঁচটি মেডিক্যালে সিন্ডিকেট চালান অভীকরা। পরীক্ষা ব্যবস্থা, পোস্টিং-সহ নানা দুর্নীতিতে যুক্ত। অভীক এতটাই ক্ষমতাশালী যে, করোনা-পর্ব মিটে যাওয়ার পরেও, ২০২৩ সালে কোভিডের বিশেষ কোটায় এসএসকেএমে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ পান।” এই চিকিৎসক সংগঠনের দাবি, ‘বর্ধমান শাখা’র ঘনিষ্ঠেরা প্রথম শ্রেণিতে পাশ করে, হাউসস্টাফ হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু ‘শাখার’ বিরোধিতা করলে, ফেল করানোর ভয় দেখানো হয়। অভীকের অবশ্য দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। মিথ্যে এ সব অভিযোগ নিয়ে বলার কিছু নেই।”
তথ্য সহায়তা: সৌমিত্র কুন্ডু, সুপ্রকাশ চৌধুরী